মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন




পুতিনকে ট্রাম্পের ফোন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪ ৯:৫৪ am
file pic

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে দুই নেতার এ ফোনালাপের খবরকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। খবর এএফপি, আলজাজিরার।

পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টে থাকা অবস্থায় ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। ফোনকলের বিষয়ে অবহিত একাধিক সূত্রের নাম গোপন রেখেই ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ইউরোপের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশাল সামরিক উপস্থিতির’ বিষয়টি পুতিনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের সমাধানের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই পুতিনের সঙ্গে আবারও কথা বলার আগ্রহের কথাও ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে ট্রাম্পের প্রচার দলের পরিচালক স্টিভেন চিউয়াংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কথোপকথনের বিষয়ে আমরা কিছুই প্রকাশ করব না।’

ট্রাম্প-পুতিনের ফোনকলের বিষয়ে ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের কাছেও প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল; কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ হয়েছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে ‘নিরেট গালগল্প’ বলে উল্লেখ করেছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ ধরনের টেলিফোন আলাপের বিষয়ে বলেন, ‘এটা সর্বৈব মিথ্যা। এটা নিরেট গালগল্প। এটি কেবলই মিথ্যা তথ্য।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধরনের ফোনালাপ হয়নি।’ পেসকভ যোগ করেন, বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার জন্য পুতিনের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই।

এর আগে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনের সংকট নিরসনে আলোচনা করতে মস্কো প্রস্তুত। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়তা করতে ট্রাম্প যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তা নিয়ে তিনিও আগ্রহী।

ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার মধ্য দিয়ে বছরতিনেক ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের রাশ টানার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। কেননা দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে ট্রাম্প। এছাড়া কিয়েভের জন্য ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দেওয়া কোটি কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা নিয়েও ট্রাম্পের প্রশ্ন রয়েছে।

রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধ অনেকটাই টিকে রয়েছে মার্কিন সহায়তার ওপর। অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে যুদ্ধের প্রথমদিন থেকেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির পাশে থেকেছে জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক সরকার। বাইডেন তথা ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রিয়তায় ভাটার পেছনে অতিরিক্ত ইউক্রেনপ্রীতিকে অনেকে দায়ী করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বরাবরই বলে এসেছেন, ইউক্রেনকে এত সাহায্য-সহযোগিতা করার কোনো মানে নেই। এই যুদ্ধ থামানোও কোনো ব্যাপার নয়। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থেমে যাবে যুদ্ধ বলে দাবিও করেছেন ট্রাম্প।

যুদ্ধের ইতি টানতে চান জেলেনস্কি : অবশেষে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের ইতি টানার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি শক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সংঘাত এড়ানো যায়, সেজন্যও কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি বলে মত দিয়েছেন তিনি।

জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি স্পষ্ট বোঝাপড়া ছাড়া কূটনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। শুধু অস্ত্র দিয়েই কাজ হবে না। এজন্য শক্তি এবং কূটনৈতিক তৎপরতা একসঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।’ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতাকেই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ বলে উল্লেখ করেন জেলেনস্কি। এ সময় তিনি ন্যায্যভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোরও আহ্বান জানান। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য সহযোগিতা চেয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের দুয়ার সব সময় আদর্শিক কূটনীতির জন্য উন্মুক্ত।’ তবে একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রতি অস্ত্র সরবরাহেরও আহ্বান জানান জেলেনস্কি।

ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপের পর ব্যাপক ড্রোন হামলা : ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর পরস্পরকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রুশ এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী। রুশ বাহিনীর ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে ৬ জন নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। রোববার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেন, ‘গত রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলকে লক্ষ্য করে রেকর্ড ১৪৫টি শাহেদ ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে। এর আগে কখনো এক দফায় এত ড্রোন উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটেনি।’ এদিকে সোমবার এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোববার রুশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে রেডর্কসংখ্যক ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এ বিবৃতিতে অবশ্য ড্রোনের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, রুশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গত ২ বছরে পরিচালিত ড্রোন হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা ছিল রোববারের হামলা।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD