নারিকেল জিঞ্জিরা খ্যাত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণ নিশ্চিতসহ সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”।
বুধবার রাজধানীর ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি করেন। ‘নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে যাতায়াত ও অবস্থানে সরকারি বাধা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে’ শীর্ষক ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী সমাজ। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিন নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে উল্লেখ করে বাস্তবসম্মত এবং দেশ ও জনগণের পক্ষ হয়ে কথা বলার আহবান জানান শিক্ষার্থীরা।
‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদেশি জার্নালের রেফারেন্স টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, পর্যটকরা কোরাল স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই ২০৪৫ সালের মধ্যে নাকি সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ (নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ) ডুবে যাবে। পরিবেশ উপদেষ্টার এই কথা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। বাস্তবতা হচ্ছে- দ্বীপের কোরালগুলো অনেক বড়, অনেক ওজন, অনেক ধারালো এবং পানির অনেক নিচে থাকে যেগুলো মানুষের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব নয়। কোরাল নিয়ে আসা দূরের কথা, জীবন্ত কোরালে হাত দিলেই হাত কেটে যায়। তাই কথিত বিদেশি জার্নাল কিংবা পরিবেশবাদীদের কোরাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য সেটি অসত্য ও মিথ্যা প্রচারণা। তাই মিথ্যা অজুহাতে দ্বীপে যাওয়া ও অবস্থানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার রহস্য জনগণ জানতে চায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই- পরিবেশ উপদেষ্টা বিদেশি পরামর্শে চলছেন। কিন্তু দেশের মানুষের পরামর্শ ও দাবি-দাওয়াকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বিদেশি জার্নালের পরামর্শে তিনি নিজ দেশের পর্যটন শিল্প ও দ্বীপবাসীকে একটা মারাত্বক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যেটা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।
পরিবেশবাদীরা বলছে, দ্বীপের কোরাল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কোরাল ক্ষয় হয় না বরং প্রতি বছর গড়ে প্রায় ০.৫-২.৮ সেমি হারে বৃদ্ধি পায়। দ্বীপে সরজমিনে দেখা গেছে, মৃত কোরাল জমে দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, কোরাল ক্ষয়ে নাকি দ্বীপ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে বিজ্ঞান ও বাস্তবতার মিল পাওয়া যায় না।
স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব মজুমদার বলেন, বাস্তবে নারিকেল দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুর। দ্বীপে কুকুরের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ডেকে আনছে। ক্ষুধার্ত কুকুরের পাল সৈকতে আসা লাল কাকড়াকে আক্রমণ করে, কচ্চপের ডিম খেয়ে ফেলে। দ্বীপে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দ্বীপ থেকে সেই কুকুর অপসারণ করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ পরিবেশ উপদেষ্টা এখন পর্যন্ত নেননি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অবস্থানে রয়েছে। দ্বীপে ভ্রমণ বন্ধ রাখলে এক সময় দ্বীপ জনশূন্য হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের মগ, আরাকানি ও ভারতের জেলেরা একসময় দ্বীপটি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালাবে। ইতিমধ্যেই মিয়ানমার ও আরাকান আমি দ্বীপটিকে একাধিকবার তাদের বলে দাবিও করেছে। অর্থাৎ দেশের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদেই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপকে সবসময় জনবান্ধব ও জনগণের আসা যাওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবেশবাদসহ কোনো কিছুর অজুহাতেই দ্বীপ ভ্রমণে বাধা দিলে দ্বীপটি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ ভ্রমণে সব ধরনের সরকারি বাধা তুলে নিতে হবে।