তৃণমূল থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থামছেই না। বেপরোয়া চাঁদাবাজি, জবরদখলসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এতে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড। ক্ষুব্ধ দলের সাধারণ নেতাকর্মীও। বিতর্কিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর দলীয় অবস্থান নেওয়ার পরও তাদের থামানো যাচ্ছে না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ছেন তারা।
চট্টগ্রামের রাউজানে ধনী লোকজনের তালিকা করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায়, না পেলে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ জন্য গত ৫ নভেম্বর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে তাঁকে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার জবাব দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, জিয়া পরিবারের পর তাদের পরিবারই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ দর্শানো নোটিশে প্রবাসী ব্যবসায়ী ফোরকানের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হলে বিষয়টি মিথ্যা বলে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।
গত ১৭ আগস্ট রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় জিয়াবাজার এলাকায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীর সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপিতেও অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীকে শৃঙ্খলায় রাখতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বদ্ধপরিকর এবং তিনি সব ধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পরও কেউ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়লে তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়াসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তিনি রাউজানে তাঁর সমর্থকের সঙ্গে গিয়াস কাদের চৌধুরীর সমর্থকের সংঘর্ষের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কয়েক দিন আগে ফেসবুকে ইসকনের সংগঠক চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্তসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন নগরীর ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। এ ঘটনায় গত ১ নভেম্বর তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গত আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে তাদের দখলে থাকা হাটবাজার, ঘাট ও প্রতিষ্ঠান বিএনপির নেতাকর্মী ও অনুসারীরা দখলে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপক চাঁদাবাজির পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়ছেন তারা।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে দলের অবস্থান কঠোর। অপরাধ করে কেউ ছাড়া পাচ্ছেন না। দলের হাইকমান্ড থেকে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে, যত গুরুত্বপূর্ণ নেতাই হোন না কেন, অনিয়মে জড়ালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল গাড়ি সরানোয় সহযোগিতার অভিযোগ উঠলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মিয়াকে শোকজ করা হয়। পরে ওই কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি।
জানা যায়, সিটি করপোরেশনের আওতায় কর্ণফুলী নদী ও নগরীর বড় খালগুলোতে ১৯টি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ঘাট থেকে টাকা আদায়ের জন্য গত বছর ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাদারদের সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা ছিলেন। প্রভাব খাটিয়ে তারা ঘাটগুলো ইজারা নেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঘাটগুলোর দখল নেন এলাকাভিত্তিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। সমকাল