ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিলে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
‘বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর দুঃখজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে,’ বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামক একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
‘বাংলাদেশ সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, গতকাল বিকেলে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামক একটি হিন্দু সংগঠন সহিংস বিক্ষোভের আয়োজন করে।
‘বিক্ষোভকারীদের বড় একটি দল পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ডেপুটি হাইকমিশনের সীমানায় প্রবেশ করলে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়… তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করে’ বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হলেও ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতার ভুগছেন।
যেকোনো ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনসহ ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি কূটনৈতিক এবং অ-কূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় খুন হন চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে ওইদিন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সকাল ১১টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এরপরই কয়েকশ ইসকন সমর্থক আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা চিন্ময়কে বহনকারী প্রিজন ভ্যান প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলেও তারা পথ অবরোধ করে রাখেন। এ সময় প্রিজনভ্যানের চাকাও পাংচার করে দেওয়া হয়। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলিফকে আদালতের মূল ফটকের প্রবেশমুখের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশের গলি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে শনাক্ত করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
তাদের মধ্যে একজন হলেন বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ কান্তি দাশ। আরেকজনের নাম জিয়া উদ্দিন ফাহিম। তিনি বাকলিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
এছাড়া, রাজীব ভট্টাচার্য ওরফে সুমন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের এক নেতার অনুসারী এবং একটি শিপিং কোম্পানির কর্মচারী বলে জানা গেছে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কোতোয়ালী পুলিশের গ্রেপ্তার করা আটজনের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। অন্য সাতজন হলেন রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও সনু মেথর।
সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।