বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন




কী দোষ ছিল ছেলের, প্রশ্ন অলিফের মায়ের

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:১৮ am
Mayer Daak mothers_call Maayer Daak মায়ের ডাক মায়ের ডাক মানববন্ধনMayer Daak mothers_call Maayer Daak মায়ের ডাক মায়ের ডাক মানববন্ধন ma enforced disappearances গুম
file pic

সন্তান আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হারিয়ে বাবা জামাল উদ্দীন ও মা হোসনে আরাও হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। অনাগত সন্তানের মুখ না দেখে পৃথিবী থেকে আলিফকে বিদায় নিতে হবে, এটি কল্পনাও করেননি কেউ। তিন বছরের তাসকিয়া। আইনজীবী সাইফুল ইসলামের। দুদিন ধরে সে বাবাকে দেখছে না। তার চোখে যেন রাজ্যের জিজ্ঞাসা। বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকায়। খুঁজে বেড়ায় বাবার মুখ।

চট্টগ্রামে মঙ্গলবার বিকালে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন আলিফ। তাকে প্রথমে লাঠি ও ইট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। ভেঙে ফেলা হয় তার মাথার খুলি ও একটি পা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে উপর্যুপরি কোপ দেয় পিঠে ও ঘাড়ে। এ ঘটনায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে তাকে হত্যার সময় কাছের একটি ভবন থেকে এক তরুণীর বুকফাটা আর্তনাদ শোনা যায়। কিন্তু উন্মত্ত ঘাতকদের ভয়ে আলিফকে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি কেউ। এদিকে স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন। সাত ভাইবোনের মধ্যে আইনজীবী আলিফ ছিলেন চতুর্থ। সন্তানকে হারিয়ে বাবা জামাল উদ্দীন ও মা হোসনে আরাও হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। অনাগত সন্তানের মুখ না দেখে পৃথিবী থেকে আলিফকে বিদায় নিতে হবে, এটি কল্পনাও করেননি কেউ।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মেথর পট্টির ভেতর সড়কের ওপরে আলিফকে মারধর করছে ঘাতকরা। এ সময় মাথায় হেলমেট ও কমলা রঙের গেঞ্জি পরা এক যুবককে কোপাতে দেখা যায়। বাকিরা আঘাত করছে লাঠি ও ইট দিয়ে। পরে সড়কের এক পাশে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত আলিফের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

অ্যাডভোকেট আলিফের সঙ্গে একই চেম্বারে প্র্যাকটিস করা অ্যাডভোকেট রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ আলিফকে মেথর পট্টি থেকে উদ্ধার করে মেইন রোডে নিয়ে এলে আইনজীবীরা দেখতে পান। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আলিফের লাশ গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয় বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহারায় লাশ উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহ (রা.) মাজার মাঠে রাখা হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নেমে আসে শোকের ছায়া। আসরের নামাজের পরপরই তার নামজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বুধবার সন্ধ্যার পর নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তার গ্রামের বাড়িতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তারা নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং আলিফ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বাস্ত করেন।

আলিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বুক চাপড়ে কাঁদছেন তার মা হোসনে আরা বেগম। নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছেন বাবা জামাল উদ্দিন। স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা ছিল কারও। হোসনে আরা বলেন, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পেল না আমার ছেলে। তার কী দোষ ছিল? তিনি আল্লাহর কাছে ছেলে হত্যার বিচার চান।

আলিফের আড়াই বছর বয়সি সন্তান বাড়িতে এত মানুষ জমায়েত হওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। তাসকিয়া বুঝতে পারছে না তার বাবা আর নেই। আর কোনোদিন তাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খাবে না। নিষ্পাপ শিশু তাসকিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অনেককেই দেখা গেছে অশ্রু লুকাতে।

সাইফুলের বড় ভাই জানে আলম বলেন, ভাইয়ের পরিবারকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব, তার পরিবার চলবে কীভাবে বলেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন তিনি। অ্যাডভোকেট আরফাতুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আলিফ আমার জুনিয়র ছিল। কিন্তু আমরা একসঙ্গে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হই। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না। একজন তরুণ আইনজীবীর জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের জমায়েত বলে দেয় সে কতটা প্রিয় ছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, আইনজীবী আলিফের শরীরে দুটি কোপের আঘাত রয়েছে। ভারী বস্তুর আঘাতে তার মাথার খুলি ভেঙে গেছে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD