চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা কম-বেশি ৫০ হাজার। তবে বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা নিলাম যোগ্য কন্টেইনারই রয়েছে ধারণক্ষমতার প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। যা চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে বন্দরকে।
কাস্টমসের জটিলতা আর নিলামকারী প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম তৈরি করেছে এই ভয়াবহতা। যা নিয়ে অতিসম্প্রতি কাস্টমসকে একটি চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। যাতে উঠে আসে ভয়াবহ চিত্র।
এতে উল্লেখ করা হয়, বিক্রি এবং ধ্বংসযোগ্য কন্টেইনার রয়েছে ১০ হাজার ২৯৩ টিইইউএস। আছে ৫শ’ ৭৪টি গাড়ি আর ৮২ হাজার ২শ’ ৪৪ প্যাকেজ মালামাল। যার মধ্যে আবার ২শ’ ৪২ বক্স ও ১শ’ ৬৫ প্যাকেজ বিপজ্জনক এবং ৪৪ বক্স কন্টেইনার জরাজীর্ণ।
বন্দরে পৌঁছার ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না হলে শুরু হয় নিলাম প্রক্রিয়া। তবে সমন্বয়হীনতা, নানা আইনি আর প্রক্রিয়াগত জটিলতায় থমকে যাচ্ছে নিলাম। অভিযোগ, নিলামের পরিবর্তে ধ্বংসেই বেশি আগ্রহ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান কেএম করপোরেশনের। কেননা এজন্য শিপিং এজেন্ট থেকে মেলে কন্টেইনারপ্রতি বাড়তি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ উদ্দেশ্যে চলে ইনভেন্ট্রিসহ বিভিন্নক্ষেত্রে কালক্ষেপণও।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, এ কার্যক্রমটি দ্রুত শেষ হলে বন্দরের ইয়ার্ড আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে পারি বা নতুন কন্টেইনার রাখতে পারি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস বিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নাঈম জানান, বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অনভিজ্ঞতা ও সম্বনয়হীনতায় এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এখানে ১২/১৩ জন সদস্য আছে তাদের একজন না থাকলে অনুমোদন মেলে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার মো. জাকির হোসেন জানান, যদি আমরা একটা সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে পারি তাহলে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে একটা বড় পরিবর্তন আসবে আশা করছি।
২০২১ সালে কেএম করপোরেশন ৩ বছরের জন্য নিযুক্ত হয়েছিল নিলাম আর শ্রমিক সরবরাহকারী হিসেবে। তবে চুক্তির বাইরে করেছে ধ্বংসের কাজও। চুক্তি অনুযায়ী নিলামের জন্য টনপ্রতি ৭ আর শ্রমিক সরবরাহের জন্য ৩ পয়সা করে নেয়ার কথা। কিন্তু তারা আদায় করেছে ৫০ পয়সা করে। তবে অফিসে গিয়ে না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. মোর্শেদকে ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি নতুন ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয় কাস্টমস। আছে অন্যদের দরপত্র জমায় বাধাদানের অভিযোগ। তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ বাগিয়ে নেয় কেএম। ওঠে দরে ঘষামাজারও অভিযোগ। কে এমের অনুকূলে দরপত্রের নথিপত্র তৈরিসহ নানা কাজে কাস্টমসের নিলাম ও প্রশাসন বিভাগের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজস রয়েছে, তাদের অন্যতম সাবের নূর চৌধুরী।
সবশেষ গত বছর ধ্বংস করা হয় ৩শ কন্টেইনার পণ্য। বিপরীতে ই-অকশন হয় ৮টি। এ বছর এখন পর্যন্ত ২১ কন্টেইনার ধ্বংসের বিপরীতে ই-অকশন হয় ৫টি।