ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর এই চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সেমিনারে দেওয়া মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত সেমিনারে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে কিছু অনভিপ্রেত মন্তব্য করেছি, তার জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। পরবর্তী সময়ে বিশদভাবে চিন্তা করার পর আমি বুঝতে পারি যে, আমার কথাগুলো হঠকারী ও অবিবেচনাপ্রসূত ছিল, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মনে আঘাত দিতে পারে বা তাদের বিক্ষুব্ধ করতে পারে। তবে আমার সেরকম উদ্দেশ্য ছিল না। বোধহয় আমি যা বলতে চেয়েছিলাম, সেটা ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে আমার মন্তব্যগুলো পূর্ববর্তী সরকারের কার্যক্রম থেকে উদ্ভূত এই খাতের আর্থিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমার হতাশা থেকে উৎসারিত ছিল। তবে এখন বুঝতে পারছি যে, উক্ত মন্তব্যসমূহ যথাযথ ছিল না এবং সেসব বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবেদিত কর্মকর্তাদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মানকে প্রতিফলিত করেনি।’
চিঠিতে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি লিখেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে ব্যাংকিং খাতে কাজ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পেশাদারত্ব, দক্ষতা এবং আমাদের আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতির প্রতি সর্বদা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছি। এই কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে এবং তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সততার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সংশয় বা সন্দেহ নেই। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের জন্য যে আস্থা বা সহযোগিতা প্রয়োজন, তাকে খাটো করা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্বীকার করি যে, একজন প্রবীণ ব্যাংকার হিসেবে তীব্র আবেগাক্রান্ত আমার মন্তব্যগুলো পেশাদারত্বের পরিচয় বহন করেনি। সেসব ছিল নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য, যা ভালোমন্দ বিবেচনার তাৎক্ষণিক ব্যর্থতার কারণেই করেছিলাম আমি। আমার কিছু মন্তব্যের কারণে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে বা কোনও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকলে— তার জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত ও দুঃখিত। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, ভবিষ্যতে আমি সদা সতর্ক থাকবো এবং এই ধরনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি আশা করি, এই অনিচ্ছাকৃত মন্তব্যের জন্য আমার আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থনা গৃহীত হবে এবং আমরা পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার চেতনায় একসঙ্গে আমাদের আরদ্ধ কাজ চালিয়ে যেতে পারবো।’
চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমার অনিচ্ছাকৃত মন্তব্যে মাধ্যমে কাউকে আঘাত বা কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে পুনরায় ক্ষমা চাইছি।’