শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন




বিদেশে বাংলাদেশিদের কার্ডে লেনদেন বছরে সর্বোচ্চ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ৮:২৪ pm
visa logo VISA ATM ভিসা ডেবিট কার্ড এটিএম কেনাকাটা বিল পরিশোধ টাকা বুথ VISA ATM payment cardholder merchant Endrosment EMI Debit debt প্লাস্টিক ক্রেডিট ডেবিট ডিজিটাল প্রিপেইড কার্ড অনলাইন কেনা-বেচা কেনাকাটা ইএমআই খরচ ভিসা automated teller atm machine Booth অটোমেটেড টেলার মেশিন এটিএম মেশিন বুথ
file pic

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের নভেম্বরের দেশভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

বছরে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশিদের বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৩৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদেশে কার্ডে লেনদেন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও এটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ৯২৯ কোটি টাকা লেনদেনের তুলনায় কম।

আর দেশের অভ্যন্তরেও কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ লেনদেনের পরিমাণ পৌঁছেছিল ৪৪ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কার্ড বিভাগের প্রধান তাসনিম হোসেন ডিসেম্বরে বিদেশে এ ধরনের লেনদেন বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন।

‘সাধারণত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নানা অফার দিয়ে থাকে, সে কারণে প্রতিবছরের ডিসেম্বরেই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ে,’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, একজন গ্রাহকের জন্য ১২ হাজার ডলার পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টের অনুমোদন থাকলেও ডলার সংকটরে কারণে ব্যাংক সর্বোচ্চ ছয় হাজার ডলারে সীমিত থাকত।

‘এখন ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ায় লেনদেনের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। একজন গ্রাহক চাইলে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত অ্যান্ডোর্স করতে পারছেন,’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। ওই মাসে দেশে সব ধরনের কার্ড লেনদেন ব্যাপকভাবে কমে। ওই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

আগস্ট মাসে বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমার মূল কারণ সরকার পতনের পর দেশজুড়ে অস্থিরতা, কিছু ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং আর্থিক খাতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের কার্ড বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, ‘জুলাই ও আগস্ট মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক কমে গিয়েছিল। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকরা খরচের রাশ টেনে ধরার পাশাপাশি দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে ব্যাংকও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ফলে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে পতন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে এসে দেশের ভেতরে ও বাইরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেশ পরিমাণে বেড়েছে, যা ইতিবাচক দিক। কারণ এ মাসে ব্যাংকগুলো নানা অফার দেয় এবং বিদেশে বাংলাদেশিরা বেশি যান।’

তবুও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত বছরের ডিসেম্বরে কার্ডে বিদেশে লেনদেন কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা কম পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

‘এর অন্যতম কারণ হলো ভারত থেকে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতা না থাকলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেশি হতো।’

কোন দেশে কত খরচ করছেন বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের নভেম্বরের দেশভিত্তিক লেনদেনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোট লেনদেনের ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

দেশভিত্তিক অন্যান্য লেনদেনের মধ্যে ভারতে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার সর্বাধিক হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোতে, যা মোট লেনদেনের ৩৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এছাড়া নগদ উত্তোলন ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং পরিবহন খাতে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতগুলোয় সম্মিলিতভাবে ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ এ ধরনের লেনদেন হয়েছে।

দেশের অভ্যন্তরে কার্ডে লেনদেন ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দেশের অভ্যন্তরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫ কোটি টাকা, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে বছরের জুনে এর পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত জুন থেকেই লেনদেনের পরিমাণ ৩৪ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ছিল। ডিসেম্বরে এসে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট কিছুটা কমে আসায় লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি সময় ব্যাংক মানেই ছিল লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা, উত্তোলন, পে-অর্ডার নগদায়ন। সময়ের সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনে সেবার ধরন বদলেছে। এখন আর আগের সেই দিন নেই।’

‘কার্ড কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটার বিল, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিলসহ নিজ থেকে বিভিন্ন পরিশোধ করা যাচ্ছে। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করা যাচ্ছে এক ক্লিকে। এতে নগদ বহনের ঝামেলা কমেছে,’ বলেন তিনি।

কার্ড লেনদেনে উৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলো ছাড়সহ নানা অফার দিচ্ছে বলে জানান তিনি। ‘ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার বিল পরিশোধে মিলছে ছাড়। অনেক ব্যাংকের কার্ডের ধরনভেদে ফ্রিতে বিভিন্ন বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মহামারির পর থেকেই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ছে। ২০২০ সালে হয়েছে ২০ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, ২০২১ সালে হয়েছে ২৭ হাজার ৭৪ কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেন বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।

এরপর ২০২৩ সালে কার্ড লেনদেন আরও বেড়ে হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এসে আগের বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় কিছুটা কমে হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫ কোটি টাকা।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD