আসন্ন রমজানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রমের মাধ্যমে ঢাকার ২৫টি স্পটে সুলভ মূল্যে গরুর মাংস, মুরগি ও ডিম বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করবে সরকার। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, রমজান মাসে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে। প্রথম রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত ঢাকা শহরে ড্রেসড ব্রয়লার, ডিম, পাস্তুরিত দুধ ও গরুর মাংস এবং সারাদেশে ব্রয়লার, ডিম, পাস্তুরিত দুধ, গরুর মাংস ও খাসির মাংস সুলভ মূল্যে বিক্রয় করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ড্রেসড ব্রয়লারের মাংস ২৫০ টাকা, প্রতি লিটার পাস্তুরিত দুধ ৮০ টাকা, প্রতি ডজন ডিম ১১৪ টাকা ও প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে সুলভ মূল্যে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রয় হবে। জুলাই বিপ্লবের সময় যেসব স্থানে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেশি ছিল সেসব স্থানকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং বস্তি এলাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার মেরুল বাড্ডার দক্ষিণ বারিধারা আবাসিক এলাকার (ডিআইটি প্রজেক্ট) সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে পবিত্র মাহে রমজানের এই বিপণন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত ১ নভেম্বর থেকে সুলভ মূল্যে ডিম বিক্রি কার্যক্রম চলমান। এর আওতায় ৮ বিভাগের ৬১টি জেলার ৩৬৪ উপজেলায় মোট ৩৭৭টি পয়েন্টে রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭ পিস ডিম বিক্রি হয়েছে। রমজানেও এসব পয়েন্টে সুলভ মূল্যে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, যেহেতু রমজান মাসে মাছের দাম সাধারণ বাজারে মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে, তাই আলাদাভাবে কোনো কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) বিক্রয় কেন্দ্রে সামুদ্রিক মাছ, কাপ্তাই লেক থেকে আহরিত ‘রেডি টু কুক’ ফিস পাওয়া যাবে। আর ইলিশের মৌসুম না হওয়ায় এখন ইলিশ মাছ দেয়া যাচ্ছে না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা জানান, বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ মাছের প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন মাস হওয়ায় আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ, এখন থেকে সামুদ্রিক জলসীমায় ইলিশ ও অন্যান্য মাছের আহরণের নিষিদ্ধকাল থাকবে ৫৮ দিন (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন)। অন্যদিকে হাওরে দেশীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য ১৫ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত হাওরে পানি আসার প্রেক্ষিতে ২০ দিন বা সর্বোচ্চ ১ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে।
ফরিদা আখতার বলেন, মাছের দাম এখনো বেশি। মৎস্যজীবী মাছ ধরার খরচ বেড়েছে। দাদন ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করছে সরকার। দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না মৎস্যজীবীরা। সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। দাম কমাতে চেষ্টা করছে সরকার। এ সময় ভিজিএফ প্রকৃত মৎস্যজীবীদের দিতে তালিকা হালনাগাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রবাসীদের ইলিশ পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরা ইলিশ পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। আগামী মৌসুমে প্রাথমিক অবস্থায় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসীদের জন্য ১১ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ সরবরাহ হবে। অর্থাৎ এ বছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই ইলিশ সরবরাহ করা হবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইলিশ পাঠানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত সরকার দুর্গা পূজার সময়ে ভারতে ইলিশ দিতো। গতবার যখন দেয়া হবে না বলা হয়েছে, সেখানকার বাঙালিরা চেয়েছে। সরকার কিছু দিয়েছে। তবে এখনো সরকারের অবস্থান হলো এ ধরনের রপ্তানি করতে চাই না। একমাত্র যেখানে বাঙালিরা আছে, সেখানে দেবো। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ভারতসহ সব দেশেই ইলিশ পাঠানো হবে।