২০২৪ সালের তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে ২০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে
তথ্য মতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংক খাতে ২০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চে) পুনঃতফসিল করা হয় ২ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালে তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে ১৮ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছিল। সে হিসাবে ২০২৪ সালের একই সময়ে এক হাজার ৯২২ কোটি টাকা বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৬৫০ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৭ হাজার ৯৬৩ টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না গ্রাহক। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় ব্যাংকের টাকা নিজের মনে করে রেখে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে লাগামহীন বাড়ছে মন্দ বা খেলাপি ঋণ। আদায়ে কঠোর না হওয়ায় নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। অন্যদিকে কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে পুনঃতফসিলের পথ বেছে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এসব কারণে খেলাপির সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী অনেক আগে থেকেই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। একসময় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন জমা নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারতো। এখন ডাউন পেমেন্টের ৩ শতাংশ নিয়ে পুনঃতফসিল করতে পারে ব্যাংক। এ ছাড়া এখন ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ প্রথম দুই দফা ৮ বছর করে ১৬ বছর, তৃতীয় দফায় ৭ বছর এবং চতুর্থ দফায় ৬ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ পায়। এসব কারণে প্রকৃত ঋণ খেলাপির অঙ্ক আড়াল থেকে যাচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষমতা ছিল। তখন ব্যাংকগুলো তাদের পর্ষদে পুনঃতফসিলের প্রস্তাব পাস করে তা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতো। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তা যাচাই-বাছাই করে পুনঃতফসিল হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিত। ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করছে।