আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জুম্মার নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যৌথভাবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
‘গুড’ আওয়ামী লীগ আর ‘ব্যাড’ আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নাই, আওয়ামী লীগ মানেই খুনি ও গণহত্যাকারী বলে উল্লেখ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বের হয়ে হলপাড়া দিয়ে ভিসি চত্বর এলাকা প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের এসে শেষ হয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার চাই’, ‘খুনি লীগের বিচার না হলে বাংলাদেশ বাঁচবে না,’ ‘জান দেবো, জুলাই দেবো না’, ‘খুনি লীগের পুনর্বাসন রুখে দাও জনগণ’, শহীদেরা দিচ্ছে ডাক, খুনি লীগ নিপাত যাক’ প্রভৃতি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
বক্তব্য প্রদানকালে শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে যদি নির্বাচন করে তবে বাংলাদেশে রক্তের যমুনা বয়ে যাবে। দু’হাজারেরও বেশি শহীদ, ৫০ হাজারেরও বেশি অঙ্গহারা আহত ও তাদের মা-বাবার ‘কমস’, ওয়াসিম, মুগ্ধসহ শহীদদের রক্তের কসম- শরীরে রক্তবিন্দু থাকতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দিবো না।
তিনি আরো বলেন, সুযোগ পেলে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে কচুকাটা করবে আওয়ামী লীগ। সুতরাং, শরীরে রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেবো না।
এসময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতকে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, বিএনপি আপনারা ঠিক কোন কারণে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে অবস্থান গ্রহণ করেন না? জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিবৃতি দেন নাই? এটার উত্তর চাই।
জুলাই, আওয়ামী লীগ ও ইসরায়েল ইস্যু কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় উল্লেখ করে হাদি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার কিনেছিলো, সেই স্পাইওয়্যারের হিসাব দিতে হবে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের পাসপোর্টে ভারতের প্রেসক্রিপশনে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটা তুলে দিয়েছে। নতুন জুলাইয়ের বাংলায় পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটা লেখার দাবি জানান।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবি জোয়াবায়ের বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন একটি দলকে নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের এখনো রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এখনো তাদের বিচার হয়নি। বরং কিছু রাজনীতিবিদ তাদের আবার জাতীয় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, তারা বলছেন এটি হবে ‘ভালো আওয়ামী লীগ’। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের মধ্যে মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা দেখছি না। বরং তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আমাদের হুমকি দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কোন বিকল্প নেই।
এই দাবির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক শীর্ষ সমন্বয়ক মুসাদ্দেক ইবনে মোহাম্মদ বিন আলী বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা দরকার।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সাত মাস পার না হতেই এখনো কোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জোরালো দাবি তুলেনি।
তিনি নবগঠিত প্ল্যাটফর্মের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ২২ মার্চ রাজু স্মারকে অবস্থান ও ইফতার কর্মসূচির ঘোষণা দেন এবং সকল মতাদর্শের মানুষকে এতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আশ্বাস দেন, সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করলেই এই প্ল্যাটফর্ম বিলুপ্ত করা হবে।