বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন




নিরাপদ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, জঠিল হতে পারে ইউরোপে আশ্রয়

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ ৫:২৯ pm
labour জনশক্তি প্রবাসী এয়ারপোর্ট MANPOWER EXPORTS HSIA CAAB migrant workers wage worker মাইেগ্রন অভিবাসী শ্রমিক মাইেগ্রন অভিবাসী শ্রমিক রেমিট্যান্স রেমিটেন্স মজুর ডলার রির্জাভ migrant workers worker মাইেগ্রন অভিবাসী শ্রমিক hazrat shahjalal international airport dhaka biman হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিমানঘাঁটি Hazrat Shahjalal International Airport বিমানবন্দর বিমান বন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিমানঘাঁটি Hazrat Shahjalal International Airport বিমানবন্দর বিমান বন্দর Hazrat Shahjalal International Airport Flight International biman bangladesh airline বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ার লাইন্স শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিমান বন্দর এয়ারলাইনস এয়ার লাইনস ফ্লাইট
file pic

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সম্প্রতি সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ বলে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। অন্য ছয়টি দেশ হলো : কসোভো, কলম্বিয়া, মিশর, ভারত, মরক্কো ও তিউনিশিয়া।

এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে মূলত আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য। কারণ ইইউ মনে করছে, এসব দেশ থেকে যারা ইউরোপে আশ্রয় চাইছে, তাদের অধিকাংশের আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ২০২৬ সালের জুন থেকে যে নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তার কিছু অংশ আগেই বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এ তালিকায় থাকা দেশের নাগরিকদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি করা হবে। কমিশন বলছে, এই পদক্ষেপে ভিত্তিহীন আবেদনগুলো দ্রুত বাতিল করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও সহজ হবে।

কমিশনের এক মুখপাত্র মার্কুস ল্যামার্ট জানিয়েছেন, এই তালিকাটি ‘গতিশীল’ বা পরিবর্তনযোগ্য। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হবে। কোনও দেশকে নিরাপদ না মনে হলে, তাকে তালিকা থেকে বাদও দেওয়া হতে পারে।

প্রেক্ষাপট
২০১৫-১৬ সালে ইউরোপে বিপুল সংখ্যক মানুষের অভিবাসন ঘটার পর থেকেই আশ্রয় নীতিতে সংস্কারের আলোচনা চলছিল। ২০২৩ সালেই প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে।

বহুদিনের আলোচনার পর ২০২৪ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি বড় সংস্কার চুক্তি অনুমোদিত হয়। এটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ইইউ চাইছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম আগেই চালু করতে।

প্রথমত যেসব দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার হার ২০ শতাংশ বা তার কম, তাদের জন্য দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘নিরাপদ উৎস দেশ’ ও ‘নিরাপদ তৃতীয় দেশ’ নির্ধারণ করতে পারবে, যাতে আবেদনের প্রক্রিয়া সহজ হয়।

ইউরোপীয় কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, “আমরা চাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। বিশেষ করে যেসব দেশে আশ্রয়ের আবেদন জমে আছে। যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।”

বাংলাদেশের পরিস্থিতি
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিবাসনের হার অনেক বেশি। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ছিল আশ্রয়প্রার্থী সংখ্যার বিচারে ষষ্ঠ অবস্থানে। এর উপরে ছিল সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, তুরস্ক ও কলম্বিয়া।

২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি আশ্রয়ের আবেদন করেছে। একই সময়ে ৪৭ হাজার ৭৭৮টি আবেদন ছিল বিচারাধীন।

কিন্তু আশ্রয় প্রাপ্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কম, মাত্র ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৯৬ শতাংশ আবেদন নাকচ হয়েছে। তাই ২০ শতাংশের নিচে সফলতার হার বিবেচনায় বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়েছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
দীর্ঘদিন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষক শরীফুল হাসান বলেছেন, “বাংলাদেশকে নিরাপদ বলা হলে, সাধারণ বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপে আশ্রয় পাওয়া আরও কঠিন হবে।”

তিনি মনে করেন, অতীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নিরাপত্তার হুমকি থাকলেও এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন যেসব অভিবাসী যাচ্ছে, তারা মূলত কাজের খোঁজে ইউরোপে পৌঁছে নিরাপত্তার অজুহাতে আশ্রয় চাইছে। অথচ ইউরোপীয় দেশগুলো এসব কারণকে যুক্তিযুক্ত মনে করছে না। ফলে বেশিরভাগ আবেদন বাতিল হচ্ছে।

এতে বাস্তব সঙ্কটে থাকা মানুষদের ক্ষেত্রেও এখন আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, বলেন শরীফুল হাসান।

বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পথে অভিবাসনকারীদের তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল শীর্ষে।

আগে আবেদনের নিষ্পত্তিতে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগত। ফলে এই সময়টুকু ইউরোপে থেকে কাজ করত তারা। কিন্তু এখন দ্রুত প্রক্রিয়ার কারণে সেই সুযোগও কমে যাবে।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও মানবাধিকার আশঙ্কা
বিশ্বজুড়ে অভিবাসন বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করছে অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে যেমন অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যও অভিবাসন রোধে কঠোর ভিসা নীতির পরিকল্পনা নিয়েছে।

ইউরোপেও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে জার্মানি ও ইতালিসহ কয়েকটি দেশ নিরাপদ দেশের তালিকা তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইইউর একটি সম্মত তালিকা থাকলে, কিছু সদস্য দেশের শিথিল নীতির ওপর চাপ বাড়ানো যাবে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেছেন, বাংলাদেশ, মিশর ও তিউনিশিয়াকে তালিকাভুক্ত করা রোম সরকারের সাফল্য।

তবে এর আগে ইতালির বিচারকরা বাংলাদেশি ও মিশরীয় অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। কারণ ইউরোপীয় বিচার আদালতের মতে, কোনও দেশকে নিরাপদ বলা গেলেও যদি তার সব অঞ্চল বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নিরাপদ না হয়, তাহলে সেটি নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
মানবাধিকার সংগঠন ইউরোমেড রাইটস এই তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এসব দেশের অনেকটিতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রয়েছে। তাই নিরাপদ বলা বিভ্রান্তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

তবে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ল্যামার্ট বলেন, “আমরা মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছি না।”

তার ভাষ্য, প্রত্যেক আশ্রয় আবেদন ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করা হবে ইউরোপীয় আইনের আওতায়।

প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সদস্য দেশগুলোর অনুমোদনের অপেক্ষায়। এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য ইউরোপে আশ্রয়ের দরজা আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্যসূত্র : বিবিসি।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD