মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:১৪ অপরাহ্ন




দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা, ৮১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১১:১৮ am
ঋণ চুরি টাকা পাচার Per capita income মাথাপিছু আয় Reserves Reserve রিজার্ভ remittance রেমিট্যান্স প্রবাসী আয় ডলার dollar Pagla Mosque পাগলা মসজিদ কোটি টাকা Pagla Mosque পাগলা মসজিদ কোটি টাকা taka taka money laundering illegal process money generated criminal drug trafficking terrorist funding illegally concealing illicit drug trafficking corruption embezzlement gambling converting legitimate source crime jurisdictions আমদানি ওভার ইনভয়েসিং রপ্তানি আন্ডার-ইনভয়েসিং আমদানি-রপ্তানি অবৈধ জাল অর্থ পাচার জিএফআই মানি লন্ডারিং আর্থিক খাত গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ হুন্ডি অর্থ পাচার taka
file pic

ব্যাংক খাতে বাড়ছে ঋণ অবলোপন। এখন পর্যন্ত এ অঙ্ক ৮১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ঋণ অবলোপনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণ আড়াল করা হয়েছে, এটা আর মূল খাতায় দেখানো হবে না। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টি ব্যাংক গত ২১ বছরে এই ঋণ অবলোপন করে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকই অর্ধেকের বেশি খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

মন্দমানের খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন আদায় না হলে তা ব্যাংকের মূল ব্যালান্স শিট থেকে আলাদা করে অন্য একটি লেজারে সংরক্ষণ করা হয়, যা ব্যাংকিং পরিভাষায় ঋণ অবলোপন বা ‘রাইট অফ’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় ২০০৩ সাল থেকে ঋণ অবলোপন করে আসছে ব্যাংকগুলো। তবে ঋণ অবলোপনের আগে অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা শিথিল করার কারণে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে। ব্যাংকগুলো খেলাপি কমাতে এখন আগের চেয়ে ঋণ অবলোপনে ঝুঁকছে বেশি। কারণ দেশের ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ বা ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ।

অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ঋণ অবলোপন ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। এসব টাকা আর আদায় হবে না। এটা ঢেকে রেখে জনগণের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ বের করা সম্ভব নয়। তার মতে, ঋণ অবলোপনসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আড়াল করা ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণে বড় যেসব অনিয়ম হয়েছে, তার বেশির ভাগই অবলোপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত অবলোপন ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৭১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ অবলোপন বেড়েছে ৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।

ব্যাংক যে খেলাপি ঋণ আদায়ের কোনো আশা দেখে না, সে খেলাপি ঋণ ব্যালেন্স শিট থেকে সরিয়ে নিতে ‘ঋণ অবলোপন নীতিমালা’ ব্যবহার করে। তারপর অবলোপন করা ঋণকে অফ-ব্যালেন্স রেকর্ডে পাঠানো হয়। এর ফলে ব্যাংকের নিয়মিত খাতায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখাতে পারে। তবে ব্যাংকের দায় থেকে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন গাইডলাইনে বলা হয়, দুই বছর ধরে খেলাপি ও লোকসানে থাকা ঋণ ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিট থেকে অবলোপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগে এই সময়সীমা ছিল তিন বছর। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগের সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়, পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপনের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে হবে না। আগে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ টাকা।

এছাড়া ব্যাংকগুলো মামলা না করেই মৃত ব্যক্তির নামে থাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে পারবে। যা আগে ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ অবলোপনের জন্য কোনো ঋণ হিসাব আংশিক অবলোপন করা যাবে না এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ২৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলো দুই হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ৬১৩ কোটি টাকা।

অবলোপন করা শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক একাই করেছে ৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এরপর অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৫ হাজার ১২৬ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড ২ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে।

এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক ৩ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক ৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, দ্য সিটি ব্যাংক ৩ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ২ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা এবং ব্যাংক এশিয়া ২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করেছে। শীর্ষ ১০ ব্যাংক ছাড়াও পূবালী ব্যাংক ২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংক ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ২ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক ২ হাজার ৭২ কোটি টাকা এবং ইস্টার্ন ব্যাংক ২ হাজার ১৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে।
(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD