মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশের হয়ে করিডর করে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে গেলে জাতিসংঘকে দুই দেশের সরকারের অনুমতি পেতে হবে। এই আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ না হলে জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সীমিত।
জাতিসংঘের নেতৃত্বে এমন উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারের আপত্তি নেই বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর এক বার্তায় এ তথ্য জানায়।
রাখাইনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডর চালুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোববার (২৭ এপ্রিল) বলেছিলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিস্তারিত বিষয়ে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ তাতে কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী আছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক সহায়তার মাধ্যমে রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা শরণার্থীদের ফেরার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।’
খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে মানবিক সহায়তার রুটের বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে, যা নিয়ে নানা পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।’
রোববারের পর থেকে ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়, তাতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল উদ্বেগ জানায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় বলা হয়, এ বিষয়ে আসলে কী হয়েছে, তা সরকারের কাছে জানতে চাইবে তারা।
এদিকে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে সরকার তথাকথিত “মানবিক করিডর” নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’ তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করে, যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর প্রথম আলোকে জানিয়েছে, জাতিসংঘ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছে । পাশাপাশি তারা রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ তার মানবিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে।
জাতিসংঘের এই বার্তায় জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সীমান্ত পেরিয়ে যেকোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রথমে দুই দেশের সরকারকে সম্মত হতে হবে। এভাবে সহায়তা দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত। প্রথম আলো