বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন




হরমুজ প্রণালি

হরমুজ প্রণালি: অর্থনীতিতে নয়া শঙ্কা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ ১১:৪০ am
Bay Terminal এলসি LNG এলএনজি liquid Liquefied natural gaslng terminal bangladesh Ship Laffan জ্বালানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি স্পট মার্কেট খোলাবাজার আমদানি টার্মিনাল পায়রা lng জাহাজ exports Mongla Port Authority intermodal shipping Container freight transport ship rail truck unloading reloading cargo import trade Export Promotion Bureau EPB Export Market Launch Day Trip Ship Bangladesh Inland Water Transport Corporation BIWTC BIWTC Ferry transport ship watercraft amphibious vehicle passengers cargo water bus water taxi Ferry Ghat আমদানি রপ্তানি ডিপো কন্টেইনার জাহাজ নোঙ্গর শিপিং এজেন্ট ওশান ট্রেড মংলা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং নাব্য সংকট হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর আমদানি বাণিজ্য বাণিজ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন বিআইডব্লিউটিসি ফেরি ফেরী ঘাট সার্ভিস গাড়ি বিআইডব্লিউটিসি খেয়া নৌরুট লঞ্চ চলাচল ফেরি লঞ্চ মোটরনৌযান যানবাহন বাহন ভাসমান নৌযান মোংলা বন্দর জেটি
file pic

ইরান ও ইসরাইলের সংঘর্ষে নতুন করে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ইরান বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ, হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দিয়েছে। ইতিমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে। ফলে পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেল সরবরাহে মারাত্মকভাবে ধাক্কা খাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশও এর তীব্র ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ কাতার থেকে কেবল হরমুজ প্রণালি দিয়েই এলএনজি আমদানি করতে হয়।

ইরানের প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা ইসমাইল কোসারি ইরানি বার্তা সংস্থা আইআরআইএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি রপ্তানির পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইরান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শুধু জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ এটি ইরানের হাতে থাকা অদৃশ্য বোমার মতো। ইরান সত্যিই প্রণালিটি বন্ধ করলে বিশ্ব জুড়ে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের পক্ষে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা সম্ভব নয়। কেননা, এটি ইরানের অর্থনীতির লাইফলাইন।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনার ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বে সরবরাহ ঘাটতির কারণে তেলের দাম বাড়তে পারে। ইতিমধ্যেই কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, এ যুদ্ধের প্রভাবে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা পড়তে পারে।

বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি কী?:
বাংলাদেশের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রধান উৎস কাতার ও ওমান। এই দুই দেশ থেকে আসা সিংহভাগ এলএনজিই হরমুজ প্রণালি হয়ে বাংলাদেশে আসে। ফলে এই কৌশলগত নৌপথ বন্ধ হলে বাংলাদেশের গ্যাস সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের ৩০-৪০ শতাংশ তেল পরিবহন হয়। এ রুটটা বন্ধ করে দিয়েছে বা দেবে, এতে সারা বিশ্বে তেলের সংকট পড়বে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, কাতারের সঙ্গে ১৫ বছর এবং ওমানের সঙ্গে ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আসার কথা, যার মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪টি কার্গো ইতিমধ্যেই দেশে পৌঁছেছে। তবে হরমুজ প্রণালির সম্ভাব্য সংকট ভবিষ্যতের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখনো পর্যন্ত সরবরাহে কোনো সমস্যা হয়নি। কাতারের সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয়ের জন্যই সমস্যা সমান। তবে পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায়, তখন বিকল্প চিন্তা করতে হতে পারে।

বৈশ্বিক তেলের বাজারে অস্থিরতা: ইরান ও ইসরাইলের পাল্টাপাল্টি হামলার প্রভাব ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে দৃশ্যমান। মাত্র একদিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম ১২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৮.৫ ডলারে পৌঁছেছে। জ্বালানি বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, চলমান উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে তেলের দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে।

দেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী প্রভাব: বাংলাদেশে গ্যাসের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প এলএনজিনির্ভর হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি ও অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় এবং শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যয়ও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এতে একদিকে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে, অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারাও তুলনামূলক বেশি দামের কারণে অর্ডার কমিয়ে দিতে পারেন, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে রপ্তানি আয়ের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ এ পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। সংস্থাটি একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথ’ বলে বর্ণনা করেছে। প্রণালিটির সবচেয়ে সরু অংশ ৩৩ কিলোমিটার (২১ মাইল) চওড়া।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী- কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি রপ্তানির প্রধান পথ হলো হরমুজ প্রণালি। শুধু এলএনজি নয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) এক প্রতিবেদন অনুসারে, এ পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যের যা প্রায় ২১ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, যেমন ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ- এই গুরুত্বপূর্ণ রুটের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে এই দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।

রেমিট্যান্স হ্রাস পেতে পারে:
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারেন। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহেও ভাটা পড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের একটা শ্রমবাজার আছে। সেখানে যদি সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের শ্রমবাজারে একটা প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

শিল্প খাতের উদ্বেগ: দেশের শিল্প খাতেই এলএনজির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তাই এ জ্বালানির আমদানি সংকটে পড়লে তার প্রভাব পুরো অর্থনীতিতেই পড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এই সম্ভাব্য সংকটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি হুমকিতে পড়বে। ওই রুট বিপজ্জনক হলে স্বাভাবিকভাবেই জাহাজ পরিচালকরা যাবেন না। আর গেলেও বীমা খরচ এত বেশি হবে যে, এলএনজি’র দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এলএনজি’র দাম বেড়ে যেতে পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব সব খাতেই পড়ার কথা। আকাশপথে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে লিড টাইম বেশি লাগবে।

হরমুজ প্রণালির অবস্থান: হরমুজ প্রণালি পারস্য উপসাগরে যাওয়ার একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ। এর এক পাশে ইরান, অন্য পাশে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভৌগোলিকভাবে বলতে গেলে, প্রণালিটি পারস্য উপসাগরকে সরাসরি ওমান উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে এবং সেই পথ ধরে জাহাজগুলো আরব সাগরে তথা ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে।

হরমুজ বন্ধ করা কি ইরানের পক্ষে সম্ভব: ইরানের আইনপ্রণেতা কোসারির ওই হুমকির পরও হরমুজ বন্ধ করার সক্ষমতা বা রাজনৈতিক ইচ্ছা আদৌ ইরানের আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদম দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে এই প্রণালি বন্ধ করবে না ইরান। কেননা, এই প্রণালি দেশটির অর্থনীতির লাইফলাইন। ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক সংঘাতের সময় উভয় দেশই পারস্য উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এই পর্বটি ‘ট্যাংকার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। তবে কখনোই হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করেনি ইরান। এটি বন্ধ করলে ইরান নিজেই বিপদে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। mzamin.com

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: সমুদ্র বাণিজ্যে অশনিসংকেত

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত তীব্র হতে থাকায় সমুদ্র বাণিজ্যের আকাশে মেঘ জমেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ তালিকাভুক্ত তেলবাহী ট্যাঙ্কার কোম্পানি ‘ফ্রন্টলাইন’ হরমুজ প্রণালি দিয়ে উপসাগরে নতুন করে জাহাজ পাঠানোর চুক্তি থেকে সরে আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় জাহাজ মালিকরা হরমুজ প্রণালি এড়িয়ে চলতে চাইছেন।

আবার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাতে গার্মেন্ট পণ্য পাঠাতে জাহাজগুলোকেও ব্যবহার করতে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলো রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বোঝাই করে এতদিন এই পথে চলাচল করলেও এখন বাধার মুখে পড়ছে তারাও। বাধার মুখোমুখি বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের জাহাজগুলোও। বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেলের জোগান এবং এক-তৃতীয়াংশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এই পথ দিয়েই বহন করা হয়। দুবাইয়ের জেবেল আলি বন্দরকেন্দ্রিক কনটেইনার জাহাজ চলাচলেও ব্যবহৃত হয় এই পথ। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্যে পণ্য পাঠায়।

ফ্রন্টলাইনের প্রধান নির্বাহী লার্স বারস্টাড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অঞ্চলে ঢোকার জন্য এখন খুবই কমসংখ্যক মালিক চার্টার নিচ্ছেন, আমরাও না। আমরা নতুন করে উপসাগরে ঢোকার চুক্তি করছি না, এটা এখন আর হচ্ছে না।’ বারস্টাড জানান, ফ্রন্টলাইন কোম্পানির যেসব ট্যাঙ্কার আগে থেকে উপসাগরে অবস্থান করছিল সেগুলো নিরাপত্তা জোরদার করে, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর নিরাপত্তা বহরের সঙ্গে হরমুজ প্রণালি থেকে বের হয়ে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক বোর্ড সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে অনেক জাহাজ এই পথ ধরে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায়। সংঘাতের প্রভাবে এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই যাত্রা। এটির প্রভাব পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। আর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রভাব পড়লে এর ব্যাপকতা ছড়াবে পুরো দেশে।’

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তা পুরো সমুদ্র বাণিজ্যের জন্য হবে অশনিসংকেত। পণ্য পরিবহন খরচ অনেক গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে বীমার পরিমাণও।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি বাড়ছে। পোশাক রপ্তানির শীর্ষ ১০ নতুন বাজারের দুটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও সৌদি আরব। গত বছরও এই দুটি দেশে আগের চেয়ে ৪০ শতাংশ পোশাক বেশি রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

শিপিং মালিকরা খুঁজছেন বিকল্প পথ

হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প পথ হিসেবে লোহিত সাগর ও আরব সাগরের কথা চিন্তা করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। তখন জাহাজ ভাড়া অনেক বাড়বে। বেড়ে যাবে বীমা খরচও। কারণ লোহিত সাগরপথও ঝুঁকিমুক্ত নয়।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, ২০২৩ সালের শেষ দিকে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা শুরু হলে অনেক বড় শিপিং কোম্পানি এশিয়া-ইউরোপের প্রচলিত সুয়েজ খালপথ ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে বিকল্প পথে যাওয়া শুরু করে। এ জন্য লোহিত সাগর হয়ে মালপত্র পরিবহনের বীমা খরচ তখন ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, জলদস্যুতা ও অন্যান্য ঝুঁকির কারণে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর জন্য বীমা খরচ তখন এতটাই বাড়ে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে সেটা আরও বাড়বে।

‘বিপদ’ দেখাচ্ছে অতীত

সমুদ্র বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরি করতে ইরান হরমুজ প্রণালিতে এক ধরনের ‘অঘোষিত অবরোধ’ আরোপ করতে পারে। কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে উত্তেজনা চলাকালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড হরমুজ প্রণালির কাছ থেকে ‘এমএসসি এরিয়াস’ নামে একটি কনটেইনার জাহাজ আটক করে তা ইরানের জলসীমায় নিয়ে যায়। জাহাজটি ছিল ইসরায়েলের ওফার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত জোডিয়াক মেরিটাইমের সঙ্গে সংযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোরটাল শিপিংয়ের মালিকানাধীন।

বাড়বে পণ্য পরিবহন খরচ

ইরান-ইসরায়েলে পাল্টাপাল্টি হামলায় বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। দেশ দুটির সশস্ত্র হামলার জেরে ইতোমধ্যে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ অনেক দূর ঘুরে বিকল্প পথে আসতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। বাংলাদেশের এই খরচটা বাড়বে ব্যাপকহারে। কারণ আমাদের গার্মেন্ট পণ্য সমুদ্রপথে ইউরোপ ও আমেরিকাতে যায় হরমুজ প্রণালি ধরে।’

তেলের দাম বাড়তে পারে

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে দেশেও। লিটার প্রতি দাম কত টাকা পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা রয়েছে তা তিনি এখনই স্পষ্ট করেননি। বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিবেচনায় এনে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করি আমরা। এ জন্য প্রতি মাসে গড় করে মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। এখন যে
হারে দাম বাড়ছে তাতে নতুন দর ঠিক করতে হবে। তবে কত টাকা বাড়বে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’ বিশ্ব বাণিজ্যের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারসের দাম ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়। এটি গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

 




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD