বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৫ অপরাহ্ন




বিশ্ব হার্ট দিবস আজ

দেশে প্রতি ৫ মৃত্যুর একটি হৃদরোগে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ৮:২১ am
হৃদরোগ heart-day heart-day World Heart Day ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস heart হৃদরোগ বিশ্ব হার্ট দিবস চিকিৎসকরা হার্ট হৃৎপিণ্ড lung cancer Cancer Cancer Treatment Cancer disease body's cells grow uncontrollably spread parts of the body ক্যান্সার চিকিৎসা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা ডাক্তার নার্স রোগ সংক্রমণব্যাধি হার্ট অ্যাটাক ব্রেস্ট ক্যান্সার গলার গলা ক্যান্সার ধূমপান পরিবেশ দূষণ খাবার দূষণ ক্যান্সার ক্যান্সার হাসপাতাল চিকিৎসক স্ক্রিনিং হেলথ কেয়ার lung cancer কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ Heart Disease
file pic

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০২২’ বা এসভিআরএস-২০২২ (প্রকাশ ২০২৪) তথ্য অনুসারে, দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ। দেশের মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ ঘটছে হৃদরোগের কারণে। মোট মৃত্যুর ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশের কারণ হার্ট অ্যাটাক।

অন্যদিকে, তালিকার ৮ নম্বরে রয়েছে নানা ধরনের হৃদরোগ, যা মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। হার্ট অ্যাটাক ও নানা ধরনের হৃদরোগ মিলিয়ে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। অর্থাৎ দেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হচ্ছে হৃদরোগে। হৃদরোগ নিয়ে বিবিএসের এমন পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক হলেও দেশে সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ইউনিট অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সাতটি ক্যাথল্যাবের তিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে জটিল হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতি।

এমনকি অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বাণিজ্যে নেমেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘প্রতিটি হৃদস্পন্দনের গুরুত্ব দিন’।

ঢাকায় সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসা হয়—এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনজিওগ্রাম এবং এনজিওপ্লাস্টি হয়ে থাকে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০২৩ সালে ১৭ হাজার ৪৩৯টি এনজিওগ্রাম হয়েছিল; ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৫৯৩টি। তবে ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে এনজিওগ্রাম হয়েছে ৬ হাজার ৭৩১টি। অন্যদিকে, বেসরকারি পর্যায়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুরে ২০২৩ সালে এনজিওগ্রাম হয়েছে ১৬ হাজার ২১০টি, ২০২৪ সালে হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫৩টি এবং ২০২৫ সালে আগস্ট পর্যন্ত এনজিওগ্রামের সংখ্যা ১২ হাজার পেরিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ইবনে সিনা কার্ডিয়াক সেন্টার, ল্যাবএইড ও ইউনাইটেড হাসপাতালে এনজিওগ্রাম দিন দিন বাড়ছেই।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এনজিওপ্লাস্টি ও স্ট্যান্টিং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০২৩ সালে হয়েছে ৮ হাজার ১৩৪টি; ২০২৪ সালে ৫ হাজার ৯৮১টি। অথচ ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এনজিওপ্লাস্টি ও স্ট্যান্টিং হয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৩৮টি। অন্যদিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ২০২৩ সালে এনজিওপ্লাস্টি হয়েছে ৮ হাজার ৩২০টি, ২০২৪ সালে ৮ হাজার ৮৫০টি এবং চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত হয়েছে ৬ হাজার ৫০০টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হৃদরোগের চিকিৎসা দেশের বৃহৎ ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানে যেখানে ক্রমাগত কমছে, সেখানে বেসরকারি পর্যায়ে বাড়ছে, যার প্রধান কারণ দেশের একমাত্র হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এনজিওপ্লাস্টি ও স্ট্যান্টিং করার মতো দক্ষ জনশক্তির অভাব। এ ছাড়া গত এক বছরে এই প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের হৃদরোগের চিকিৎসা অনেকটা সীমিত করা হয়েছে। একজন সাধারণ রোগীর এনজিওগ্রামের সিরিয়াল পেতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্টের অভাবে আইভাস, ওসিটি এবং ওসি টি-আই এবং রোটাব্লেটরের মতো আধুনিক ও দামি যন্ত্র হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ক্যাথল্যাবে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্যদিকে, রোগীর চাপ সামলাতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনকে মিরপুরে দ্বিতীয় শাখায় ক্যাথল্যাব শুরু করতে হয়েছে।

সরকারি পর্যায়ে শুধু হৃদরোগ চিকিৎসা সীমিত হয়েছে, তাই নয়; হৃদরোগ চিকিৎসা শিক্ষাও অনেকটা ধসে পড়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদগুলো গত এক বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য। প্রায় ৩৫ জন এমডি, এফসিপিএস, ডি-কার্ড শিক্ষার্থীকে পড়ানোর মতো কোনো শিক্ষক নেই। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদগুলো এক বছরের বেশি সময় ধরে শূন্য। অভিজ্ঞদের পদায়ন হলেও তাদের যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। যার কারণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডি-কার্ড পরীক্ষায় ১২ জন অংশগ্রহণকারীর কেউই পাস করতে পারেননি। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাবসহ পুরো ইউনিট পড়ে আছে, কিন্তু লোকবল নেই।

প্রখ্যাত কার্ডিয়াক সার্জন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের ৩২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে যে সমস্যাগুলো দৃশ্যমান, সেগুলো দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল। তবে হৃদরোগ হাসপাতালের ইউনিট কমানোর সঙ্গে চিকিৎসার সম্পৃক্ততা নেই। গত এক বছরে ডিপিস ও এসএসবি না হওয়ায় চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। তবে সম্প্রতি এসএসবি শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত চিকিৎসক সংকটের সমাধান হবে। তিনি বলেন, হার্ট দিবসের মূল প্রতিপাদ্য চিকিৎসা নয়, সচেতনতা। তাই সেদিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD