উদ্ধার হবে হালদা বাঁকখালী, সুতাং, সাতলা, আলাইকুড়ি ও বারনই
পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত ৬টি বিপন্ন নদী পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পৃথক ছয়টি প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের অনুরোধ জানিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক হিসাবে এবং বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। নদীগুলো উদ্ধার করা গেলে নাব্যতা বৃদ্ধি, নদীপথে পরিবহণব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীসংলগ্ন এলাকায় কৃষিজমি ও আবাসভূমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহারে শস্য উৎপাদন বাড়ানো যাবে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে কার্যক্রম বিভাগে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পুনরুদ্ধারের জন্য যেসব প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো হলো-চট্টগ্রাম জেলার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী পুনরুজ্জীবিত (দখলমুক্ত ও বন্যা নিয়ন্ত্রণকরণ), কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী পুনরুজ্জীবিত-দখলমুক্ত ও দূষণমুক্তকরণ এবং হবিগজ্ঞ জেলাার সুতাং নদী পুনরুজ্জীবিত ও দূষণমুক্তকরণ প্রকল্প। এছাড়া খুলনা জেলার অন্তর্গত সাতলা নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ-দূষণমুক্তকরণ ও দখলমুক্তকরণ, রংপুর জেলার আলাইকুড়ি নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ এবং রাজশাহী ও নাটোর জেলার বারনই নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ-দূষণমুক্ত ও দখলমুক্তকরণ প্রকল্প।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ‘চট্টগ্রাম জেলার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী পুনরুজ্জীবিত-দখলমুক্ত ও বন্যা নিয়ন্ত্রণকরণ’ প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে হালদা নদীকে পুনরুজ্জীবিতকরণ করা হবে। পাশাপাশি এ নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, রাউজান এবং হাটহাজারী পৌরসভার বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া অন্য কার্যক্রমগুলো হলো-কালভার্ট নির্মাণ এবং নদী দখল রোধে বাঁধ তৈরি করা হবে। ‘কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী পুনরুজ্জীবিত-দখলমুক্ত ও দূষণমুক্তকরণ’ প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের মাধ্যমে নদীটির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ পুনঃস্থাপন করা হবে।
এছাড়া ১ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৪ কিলোমিটার ড্রেজিং, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, নদীদূষণ নিয়ন্ত্রণ, নদীর স্থান উদ্ধারসহ অনুষঙ্গিক কার্যক্রম করা হবে। হবিগঞ্জ জেলার সুতাং নদী পুনরুজ্জীবিত ও দূষণমুক্তকরণ’ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে এটি চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৯ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। এছাড়া ২০ মিটার সাবমার্সিবল ক্রস বাঁধ নির্মাণ এবং ৩০টি ল্যান্ড স্কেপিং করা হবে।
‘খুলনা জেলার অন্তর্গত সাতলা নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ-দূষণমুক্তকরণ ও দখলমুক্তকরণ’ প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। লোয়ার সাতলা এবং আপার সাতলা নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত নিষ্কাশনব্যবস্থা সচল করা হবে। এছাড়া ডুমুরিয়া ও বিল ডাকাতিয়া, অন্যান্য বিল এবং আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার সাতলা নদী ড্রেজিং এবং ১২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র আরও জানায়, ‘রংপুর জেলার আলাইকুড়ি নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ’ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এটিও ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন, ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, দুটি ব্রীজ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ‘রাজশাহী ও নাটোর জেলার অন্তর্গত বারনই নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ-দূষণমুক্ত ও দখলমুক্তকরণ’ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এটিও ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বারই নদীর প্রবাহপথে ২৯ কিলোমিটার খনন করা হবে। এছাড়া ৬৩ কিলোমিটার নদী দূষণমুক্তকরণ, ৯২ কিলোমিটার অবৈধ দখর উচ্ছেদসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।(যুগান্তর)