দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সৌদি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করুন। স্বল্পমেয়াদি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক গ্রিনফিল্ড প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ করুন। সৌদি আরবের উচিত বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রসারিত করা, বিশেষ করে তেল ও সারের বাইরে অন্য খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক এখন পর্যন্ত জ্বালানিনির্ভর, কিন্তু এর বাইরেও শিল্প, অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে সৌদি আরব-বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে সৌদি আরব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএবিসিসিআই)।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। কারণ- সৌদির প্রয়োজন দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে- বাংলাদেশের জ্বালানি দরকার, সৌদি আরবের রয়েছে বিপুল জ্বালানি সম্পদ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিনিয়োগ দরকার, সৌদি আরবের রয়েছে বিনিয়োগের সামর্থ্য। এছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইলসহ অনেক পণ্য রপ্তানি করতে পারে, যা সৌদি আরবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ফলে এটি দুই দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) ভারতে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে তেমন কিছু করেনি। সৌদি আরবের এই পিআইএফ ও বেসরকারি খাত বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। সৌদি সরকার ও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও সম্ভাবনাগুলোকেও কাজে লাগাতে পারে। কারণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবিনিয়োগ এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব, কিন্তু এ অর্থ স্থানান্তরে খরচ বেশি এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল। এই খাতে যৌথভাবে কাজ করে অর্থ স্থানান্তরের খরচ কমানো সম্ভব, যা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশাল স্বস্তি বয়ে আনবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী বিশ্বের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বৈশ্বিক জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি এই অঞ্চলে বাস করে। অর্থনৈতিকভাবে বড় দেশগুলো হলো- তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক ইতিমধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, আর সৌদি আরবও শিগগিরই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ এখন অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এবং ট্রিলিয়নের পথে অগ্রসরমান। তাই এই অঞ্চলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত স্থিতিশীল ও গতিশীল- প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা- কোনো কিছুই দেশের প্রবৃদ্ধিকে নেতিবাচক করতে পারেনি। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কখনও শূন্যের নিচে যায়নি। সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থেকেছে, যা অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতার প্রমাণ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই সম্মেলন হবে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা উন্মোচনের মঞ্চ এমন মন্তব্য করে ড. মনসুর বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রাচীন ও দৃঢ়। তবে বাণিজ্য, অর্থপ্রবাহ, শ্রমবাজার ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করা প্রয়োজন।