শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন




পুলিশ কমিশনের কাঠামো চূড়ান্ত

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:০৫ am
highway hig hway রোড accident rash road যানজট রাস্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি police vigilant পুলিশ অভিযান মোতায়েন
file pic

সেবামুখী, জবাবদিহিমূলক ও সঠিক ধারায় ফেরাতে পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাহিনীর সদস্যরা। কয়েকটি বৈঠকের পর শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত হলো পুলিশ কমিশনের রূপরেখা। সার্চ কমিটির মাধ্যমে হবে কমিশনের সদস্য বাছাই। সার্চ কমিটির সদস্য থাকবেন পাঁচজন। তারাই পুলিশ কমিশনের ৯ সদস্য মনোনীত করবেন। কমিশনের অধীনে ‘নাগরিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা’ ও ‘পুলিশ সংক্ষোভ নিরসন’ নামে দুটি কমিটি কাজ করবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ কমিশন গঠনের রূপরেখা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম প্রমুখ।

বৈঠক সূত্র জানায়, কমিশন তৈরির চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দু-চার দিনের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সভায় যেসব পরামর্শ এসেছে, তা কমিশন গঠনের প্রস্তাবে যুক্ত করা হচ্ছে। বৈঠকে পুলিশ কমিশনের গঠন ও কর্মপরিধি চূড়ান্ত করা হয়। পুলিশ কমিশনের পাশাপাশি জবাবদিহিতা কমিশন নামে আলাদা কমিশন করার চিন্তাভাবনা প্রথমে ছিল। পরে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হয়– পুলিশ কমিশনের আওতায় দুটি কমিটি কাজ করবে। এর মধ্যে জবাবদিহির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কোনো নাগরিক পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে ভয় পেলে, কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে অভিযোগের তদন্ত করতে পারবে। পুলিশের জবাবদিহি আরও স্বচ্ছ করতে বিভাগীয় পর্যায়ে কমিশনের অধীনে আলাদা টিম কাজ করবে। কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিবসহ সাতজন পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি দু’জন অবৈতনিক। এ ছাড়া ন্যূনতম একজন নারী সদস্য থাকবেন। এর নাম হবে ‘পুলিশ কমিশন’।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান– যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বহু দেশে পুলিশ কমিশন রয়েছে। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য– পুলিশকে আরও সেবামুখী করা; মানবাধিকার, মূল্যবোধ নিশ্চিতকরণ ও কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বাড়ানো। এ কমিশন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ, আটক, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মামলার তদন্তের মান বাড়ানোর সুপারিশ করতে পারবে। প্রতিবছর একবার সংসদে পুলিশের কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন রাষ্ট্রপতি। পুলিশের কর্মকাণ্ডে কোথায় ব্যত্যয় হয়েছে, কীভাবে কাজ করলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেত, তা প্রতিবেদনে উঠে আসবে।

সূত্র জানায়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশকে প্রযুক্তিনির্ভর করা, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ, ডেটা ম্যানেজমেন্ট, আইনকানুন সংস্কারের বিষয়েও কমিশনের সদস্যরা মতামত এবং পরামর্শ দেবেন। কমিশনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। সার্চ কমিটিতে থাকবেন– স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান।

পুলিশ কমিশনের প্রধান হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি। সদস্য থাকবেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল থেকে দুজন সংসদ সদস্য এবং সাবেক একজন পুলিশ মহাপরিদর্শক। এ ছাড়া সদস্য হবেন সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, গ্রেড-১ মর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি, বিচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা, কমপক্ষে ২০ বছর হাইকোর্টে কাজ করেছেন– এমন আইনজীবী ও একজন মানবাধিকারকর্মী।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য কমিশনের অধীনে তিন সদস্যের কমিটি থাকবে। পুলিশ কমিশনের ৯ সদস্য থেকে মনোনীত তিনজন কমিটিতে কাজ করবেন। একইভাবে পুলিশ সংক্ষোভ নিরসন কমিটিও তিন সদস্যের। তারা পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ ও অনিয়ম তদন্ত করবেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশের ভেতর থেকে এ ধরনের কমিশন গঠনের দাবি জোরালো হয়। আওয়ামী আমলে পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সে জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্যই পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।

গত ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের ১১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে পুলিশের ১৩ বিষয়ে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তার করে। বাহিনীর সংস্কারে ২২টি আইন সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে কমিশন। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে চারটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বিষয় দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের সুপারিশ রেখেছ কমিশন।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহি বৃদ্ধি করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। এ উদ্যোগে পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে সুষ্ঠু তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে কোনো ধরনের অপব্যবহার বা দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। নাগরিকদের প্রতি পুলিশের দায়িত্বশীলতা বজায় রেখে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত আইনগত ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করা হবে। একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে এবং পুলিশের কার্যক্রম যাতে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে কমিশন।

এ ছাড়া বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করলে, তারা ঐকমত্য হয়।

প্রস্তাবের খসড়ায় বলা হয়, পুলিশ যেন সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক– উভয় পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্ব কমিশনের ওপর থাকবে।

খসড়ায় বলা হয়, কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা, জবাবদিহি, পদত্যাগ এবং অপসারণের পদ্ধতি একটি আইনে নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা অনুমোদিত হবে। samakal




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD