সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন




নৌকা প্রতীক আ.লীগের ছিল না, লাঙলের মালিকানারও হাত বদল

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:৪৫ am
Bangladesh Awami League আওয়ামী লীগ আওয়ামী আ.লীগ আ'লীগ
file pic

পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৯৫৪ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি জোট তৈরি করে। যার নাম দেওয়া হয় যুক্তফ্রন্ট। এ যুক্তফ্রন্টের প্রধান নেতারা ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী এবং খাজা নাজিমুদ্দিন। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল জয় লাভ করে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করেছিল।

যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, জোটের প্রতীক ছিল ‘নৌকা’। দলটি ভেঙে যাওয়ার পর ‘নৌকা’ প্রতীকটি আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছে চলে যায়। ১৯৫৭ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নাম হয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙল। পরবর্তীতে এ প্রতীকের মালিকানা যায় আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগের কাছে। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের সময় আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হলে দলটি বিলুপ্ত হয়। পরে লাঙল প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। খবর বিবিসির।

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে নৌকা মার্কা অনেকটাই ঐতিহাসিক। গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ নির্বাচনে প্রধান দুটি প্রতিদ্বন্দ্বি দল ছিল যুক্তফ্রন্ট এবং মুসলিম লীগ। সে সময় মুসলিম লীগ ‘হারিকেন’ এবং যুক্তফ্রন্ট ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিত।

যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী মুসলিম লীগ হওয়ায় যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়ার পর নৌকা প্রতীকটিও চলে আসে আওয়ামী লীগের কাছে। ১৯৫৭ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ।

তবে নৌকা প্রতীক পেলেও এই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়।

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭০ সালেই প্রথম নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। তখন আওয়ামী লীগের শরীকরাও আর এই নৌকা প্রতীক দাবি না করায় পরবর্তীতে নৌকাই হয়ে যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক।

নৌকাকে কেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিল? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশে তখন নৌকা ছিল গণ-মানুষের কাছে খুব পরিচিত প্রতীক। যে কারণে নৌকা মার্কায় বিশেষ ঝোঁকও ছিল আওয়ামী লীগের।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এই নৌকা মার্কায় ভোটে অংশ নেয়।

২০২৪ সালে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এরপরই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক নৌকা প্রতীকও স্থগিত করে। যে কারণে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে যে প্রতীক তালিকা রয়েছে, সেখানেও স্থগিত রাখা হয়েছে নৌকা প্রতীক।

লাঙ্গলের মালিকানারও হাত বদল

নৌকা কিংবা ধানের শীষের মতোই বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক লাঙ্গল। বর্তমানে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে লাঙ্গল মার্কা।

লাঙ্গল মার্কাটি বর্তমানে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক হিসেবে থাকলেও এটি প্রথম দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয় অবিভক্ত ভারত বর্ষে।

তখন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল লাঙ্গল। সেখান থেকে লাঙ্গলের মালিকানা যায় আতাউর রহমান খানের জাতীয় লীগের কাছে।

গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমানের দল লাঙ্গল প্রতীকে অংশ নিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আতাউর রহমান এই লাঙ্গল মার্কাতেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পাশাপাশি বিলুপ্তি ঘটে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের। পরবর্তী সময়ে লাঙ্গল প্রতীকটি গ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আতাউর রহমান খান এক সময়ে এরশাদের সঙ্গে জোট গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। তারপর পরবর্তীতে সেটা জাতীয় পার্টির প্রতীকও হয়ে গিয়েছিল।

নব্বই পরবর্তী বাংলাদেশে আটটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সব নির্বাচনে জাতীয় পার্টি লাঙল প্রতীকেই ভোটে অংশ নেয়। কিন্তু এসব নির্বাচনে কখনো ক্ষমতায় যেতে পারেনি এরশাদের হাতে গড়া এই দলটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতা ছাড়ার পর গত প্রায় চার দশকে বেশ কয়েক দফায় জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখে পড়লেও দলীয় প্রতীক কখনো হাতছাড়া করেনি এরশাদের অংশ।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি আরেক দফায় ভেঙেছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন অংশ কাউন্সিল করে কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় প্রতীক হিসেবে লাঙ্গল চেয়েছে।

যদিও নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় এখনো পর্যন্ত ‘লাঙ্গল’ প্রতীক রয়েছে জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশের কাছে।
(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD