বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন




কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না: তারেক রহমান

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ ৯:৩৬ pm
Tarique Rahman তারেক রহমান Bangladesh Nationalist Party BNP ‎বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি tarek-rahman
file pic

জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রোববার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসে দলের নেতাকর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণের কর্মসূচি হিসেবে বিএনপির ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শুধুমাত্র বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সঙ্গবদ্ধ অপপ্রচার এবং ও কৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে কোন ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানানোর পর নির্বাচন কমিশন যথাসময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের।

তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে, প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় পার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নেবেন দয়া করে।

তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন। আপনাদেরকে আমি আবারো স্বাধীনতার ঘোষকের সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। শিগগির পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম আমরা জানিয়ে দেব দলের পক্ষ থেকে। দল যাকেই যে আসনে নমিনেশন দেবে বা দেয়- অনুগ্রহপূর্বক তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ দয়া করে কাজ করবেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, মনে রাখবেন- আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার কিন্তু ওৎ পেতে রয়েছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেশারেশি, বিবাদ ও বিরোধ এমন পর্যায়ে নেয়া ঠিক হবে না, যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী আপনারা যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, আপনারা সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন বা জিতছেন বা জিতবেন। বিজয়ী হবেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অফ ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয় আপনারা এমন কোন আচরণ দয়া করে করবেন না। সারাদেশে বিএনপির লাখো কোটি সমর্থক বিব্রত হয়, আপনারা কেউ এমন কোন আচরণ দয়া করে করবেন না। এসময় তিনি স্লোগান দেন, ‘ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গর্ব মিলেমিশে’।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসীনতা ইদানিং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে, অথবা কোথায় জানি কি একটা সন্দেহ দোলা দিয়ে উঠছে। আমি শনিবার একটি পত্রিকায় একটি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টে দেখলাম গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর ভেতর সাতজনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৯৮ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় রাষ্ট্র অবশ্যই উদাসীন থাকতে পারে না। সরকার এবং প্রশাসন অবশ্যই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন এখানে। কিন্তু এর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব আজ নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠনে আমাদের যেকোনো অবস্থান বা ভূমিকা রাখা। নারী এবং শিরশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

তারেক রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। তবে বিএনপি প্রতি দেশের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা প্রিয় জনগণের আকুন্ঠ সমর্থনের কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা অধিকাংশ সময় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এরকম বাস্তবতা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক আমি জনগণের কাছে বিএনপি একটি বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যুগের পর যুগ ধরে জনপ্রিয়তার যে এই ধারা, এটি বিএনপি ধরে রেখেছে, ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর সাফল্যের ইতিহাস যদি আমরা পর্যালোচনা করি, বিএনপির অবস্থান এক্ষেত্রে যথেষ্ট গৌরবের।

তিনি বলেন, এজন্য আমি সবার আগে দেশের গণতান্ত্রিক আমি জনগণের প্রতি জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। একই সাথে বিএনপির এই গৌরবজনক পথ চলায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিও আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। দেশনেত্রীর সম্মোহনী নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব বিএনপিকে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি জনপথে, প্রতিটি ঘরে ঘরে। বিএনপির গৌরবেরই দীপ্ত মশাল ঊর্ধে তুলে সামনে এগিয়ে চলা আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর পবিত্র দায়িত্ব।

তারেক রহমান আরও বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনমনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনই আগ্রহ ছিল না। আর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোন কোন ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে। যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিল না। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় ও সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তোরণের পথকে হয়তোবা সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদীবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি, সমগ্র দেশবাসী দেখেছেন- প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে উত্তোরণের পথকে কেমন যেন সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদেরকে সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোন অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্থনের পথে হাঁটতে হয় কিনা, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী যারা প্রবাসে থেকে দেশের রাজনীতির সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখতে চান, বিএনপির সদস্য হতে চান, বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন করতে চান, তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেবার জন্যই বিএনপি কার্যকর একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে উদ্বোধন হচ্ছে বিএনপির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধা। প্রবাসী বাংলাদেশীরা দূর প্রবাসে থাকলেও অধিকাংশ প্রবাসীর পরিবার ও পরিজন দেশেই বসবাস করেন। সংগত কারণেই রাজনীতির সঙ্গে অনেক প্রবাসীর সরাসরি যোগাযোগ বা সংযোগ না থাকলেও পরিবার সঙ্গে কিন্তু তাদের নিবির যোগাযোগ বা প্রতিনিয়ত একটা যোগাযোগ আছে।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা সংশ্লিষ্ট দেশের বিধি-বিধান মেনে বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখতে চান, তাদের জন্য সেই সুযোগ অবারিত থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সেই বিবেচনায় প্রবাসীদেরকে সহজেই রাজনৈতিক দলের সদস্য করার ক্ষেত্রে বিএনপির এই উদ্যোগ, একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবেই আমরা বিবেচনা করি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফ আলী খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD