বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ অপরাহ্ন




১০-১৫ আসনের নিশ্চয়তা পেলেই দলগুলো গণভোট থেকে সরে আসবে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:২৩ pm
Nurul Haque Nur activist politician vice president Dhaka University Central Students' Union ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু সহ-সভাপতি ভিপি গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর
file pic

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ১০ থেকে ১৫টি আসনের নিশ্চয়তা এবং বিরোধী দল করার আশ্বাস পেলে গণভোটের দাবি থেকে সরে যাবে বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। নুর আরও বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রান্তিক অঞ্চল থেকে অনেক ছেলে-মেয়ে উঠে এসেছে, যাদের দিকে তাদের পরিবার আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সেই তরুণদের ন্যায্যভাবে চাকরি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় তিনি শিবির বা ছাত্রদলকে তেমনভাবে দেখতে পায়নি, যারা বর্তমানে ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করছে; বরং তখন আন্দোলনে পাশে ছিল কিছু বামপন্থি শিক্ষার্থী। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ-সিজিএস আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, তার কাছে এখনো বিস্ময়কর লাগে যে, দেশের চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির এমন ভূমিধস জয় পেয়েছে, যেখানে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা তরুণরা পরাজিত হয়েছে। শুধু আন্দোলনের নেতৃত্ব নয়, সেখানে ছাত্রদলসহ আরও রাজনৈতিক সংগঠন সক্রিয় ছিল। এ অপ্রত্যাশিত ফলাফল তাকে হতাশ ও উদ্বিগ্ন করে। তিনি জানান যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, যদি সবাই ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ চায়, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে এবং ভিন্নমতকে সম্মান জানিয়ে ঐকমত্যের পথেই এগোতে হবে। তবে ঐকমত্য কমিশনের নামে অনৈক্যের প্রতীক তৈরি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং সৃজনশীল চিন্তা ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের মাধ্যমেই রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। সংলাপে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, এফইএস বাংলাদেশ এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ফিলিক্স গ্রাদেস, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। এ ছাড়া এ সংলাপে অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএস-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, সংস্কার, বিপ্লব ও নৈরাজ্যের মধ্যে পার্থক্যটি এখনো অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। সংস্কার মানে মেরামত, কিন্তু তার সীমা কোথায়? বিপ্লব ও নৈরাজ্যের মধ্যকার রেখাটাই বা কী? তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে এ বিভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক, তবে যখন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারাও সচেতনভাবে এ অস্পষ্টতাকে উপেক্ষা করেন, তখন সেটি গভীরভাবে বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে গেলেও ঐকমত্যের প্রক্রিয়া কিন্তু শেষ হয়ে যায় না। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তারা যখন ছাত্র ছিলেন, তখন ভিন্ন মতাদর্শের সবার একসঙ্গে বসা তো দূরের কথা, একে অপরের সঙ্গে কথা বলাও প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন তরুণ রাজনীতিকরা একসঙ্গে বসতে পারছে এটাই একটি বড় পরিবর্তন এবং ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। যারা রাজনীতিকে ঘৃণা করেন, তারা নিজের কাছে প্রশ্ন করবেন রাজনীতি ছাড়া কি চলা সম্ভব? তিনি আরও বলেন, নির্বাহী বিভাগের একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে হবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে যদি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো না থাকতো, তাহলে রাজনীতি আরও উন্নত হতো।

বিএনপি যদি কিছুটা নমনীয় হয়ে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে সমঝোতার পথে আসতে পারতো, তাহলে গণভোট বা জুলাই সনদ নিয়ে এত বিতর্ক থাকতো না। কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, যত দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তত দ্রুতই গণভোট বিতর্কসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সমস্যা দূর হবে। তিনি আরও বলেন, একটি নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে হবে এবং সে সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে সংস্কারগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, এ সরকার নয়। এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা বলেন, আমরা এখন এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তরুণ সমাজ শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। তবে এ অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য কেবল একজন নেতাকে বিদায় করা নয়, বরং ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে সংস্কার করা। জুলাই সনদের পর এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, পরিবর্তন কীভাবে আনা যায়, যেখানে অনেক বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।
তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করার লক্ষ্যে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় এরই মধ্যেই ‘পলিটিক্স ল্যাব’ শীর্ষক বিভিন্ন বিষয়ে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালার আয়োজন করেছে। এ ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে সিজিএস একটি জন-সংলাপের আয়োজন করে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD