বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন




রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি, পোরশে

রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি, পোরশে: ঢাকার রাস্তায় টেসলাসহ ২৫০০ বিলাসবহুল গাড়ি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ ২:২১ pm
CAR IMPORT গাড়ি আমদানি car গাড়ি রোড সড়ক মহাসড়ক যানজট রাস্তা বাস গাড়ি সড়ক road bus gridlock Study in India comp BMW X7 bmw bangladesh lead এক্সিকিটিভ মোটরস বিএমডব্লিউ এক্স সেভেন MG5
file pic

রাজধানী ঢাকার রাস্তায় চলে বিশ্বের আলোচিত টেসলা গাড়ি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ছয়টি টেসলা গাড়ির নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। শুধু টেসলা নয়; রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি, পোরশের মতো বিলাসবহুল অভিজাত গাড়ি এখন ঢাকার রাস্তার বুক চিড়ে চড়ে বেড়ায়।

অন্যদিকে রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো অভিজাত গাড়িও ঢাকার রাস্তায় অহরহ দেখা যায়। এ গাড়িগুলো যেন দেশের ধনীদের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে দেশে এখন আড়াই হাজারের বেশি এমন বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি আছে। এই গাড়িগুলোর দাম ১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা। দেশের একশ্রেণির অতিধনী ব্যবসায়ীরা এসব বিলাসবহুল গাড়ি চালান।

গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, এমন বিলাসবহুল দামি গাড়ির গ্রাহকের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজারের মতো। কেউ কেউ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন।

দেশে বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ ও আউডি (অনেকে অডি বলেন) ব্র্যান্ডের গাড়ি। রাজধানীর ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাস্তায় এমন দামি গাড়ি মাঝেমধ্যে দেখা যায়।

এক দশক আগেও রাস্তায় বিলাসবহুল গাড়ি অনেক কম দেখা যেত। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা ও বসুন্ধরার মতো অভিজাত এলাকায় এখন প্রায়ই দেখা মিলে রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। সাধারণত রাতের দিকে অভিজাত এলাকায় এমন গাড়ির আনাগোনা বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে আড়াই হাজারের বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে শুধু রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি হয়েছে ১২টি। আর গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ৮টি রোলস-রয়েস নিবন্ধিত হয়েছে।

গত জুলাই মাসে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পরে রোলস-রয়েসের ‘স্পেক্টার’ মডেলের গাড়ি। যার দাম ফিচারভেদে প্রায় ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা। তখন এই দামি গাড়ি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।

এক দশকে কত গাড়ি আমদানি
২০১৩ সালের পর থেকে রোলস-রয়েস, ফেরারি, মাজেরাতি, বেন্টলি, পোরশের মতো বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি শুরু হয়। এর আগে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভারের মতো গাড়ি বেশি আমদানি হতো।

এনবিআরের কাস্টমস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে অর্থাৎ গত এক দশকে রোলস-রয়েস, ফেরারি, মাজেরাতি, বেন্টলি, পোরশে, টেসলা ও রেঞ্জ রোভার—সব মিলিয়ে ৪৩০টি গাড়ি আমদানি হয়েছে।

এর মধ্যে রোলস-রয়েস ১২টি, ফেরারি ৩টি, মাজেরাতি ১০টি, বেন্টলি ৩৫টি, পোরশে ৫৭টি, টেসলা ৮টি, রেঞ্জ রোভার ৩০৫টি। একই সময়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ ১২৪৮টি ও বিএমডব্লিউ ৮৯৮টি আমদানি হয়েছে। সব মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি এমন বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির তথ্য পাওয়া গেছে।

গাড়ির নিবন্ধনের হিসেবে তিনটি ভাগে ভাগ করে বিআরটিএ। এই তিনটি শ্রেণি হলো কার, জিপ ও মাইক্রোবাস। তবে বিলাসবহুল গাড়ির বেশির ভাগ সেডান ধরনের। বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সেডান গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৩৪টি। আর এসইউভি ধরনের গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৫১৫টি।

গাড়ির আমদানির পর তা গ্রাহক কেনেন। তারপর গাড়ি সড়কে চালানোর অনুমতি হিসেবে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া হয়।

কোভিডের মধ্যেও বিলাসবহুল গাড়ি কেনা থামেনি
২০২০ সালের পর করোনা মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দেশে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি থেমে থাকেনি। এমন মহাদুর্যোগের মধ্যেও দেশের ধনীরা দামি দামি এসব গাড়ি কিনেছেন।

বিআরটিএ তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে আটটি। এ ছাড়া ফেরারি ২টি, বেন্টলি ৩১টি ও জাগুয়ার ৩টি নিবন্ধন হয়েছে। আর পোরশে নিবন্ধন হয়েছে ৩৫টি।

দেশে এসব বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ ও আউডি (অডি)। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা মার্সিডিজ বেঞ্জের। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ৫৭টি মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। আর বিএমডব্লিউয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪৭০। আউডি ব্র্যান্ডের গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে ২৪২টি।

বারভিডার সাবেক সভাপতি ও অটো মিউজিয়ামের স্বত্বাধিকারী হাবিব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের গাড়ি যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা মূলত বড় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক। এসব পরিবারে সাধারণত দুই বা একাধিক গাড়ি থাকে। তাঁরা তাঁদের তৃতীয় গাড়ি হিসেবে বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন।

তিনি আরও জানান, গত দেড় বছরে রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের কারণে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি কমছে।

দেশে বিএমডব্লিউ গাড়ির পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরস। ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০-এর বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে বিলাসবহুল গাড়ি শ্রেণিতে এখন বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি ও চাহিদা বেড়েছে। তিন হাজার সিসির জ্বালানিচালিত বিএমডব্লিউ গাড়ি আনতে যত খরচ হয় একই মডেলের সমান শক্তি কিংবা বেশি শক্তিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম অনেক কম। জ্বালানি খরচ প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ।’

দাম কত
দেশে বর্তমানে মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের ১৬টি, বিএমডব্লিউর ১৩টি ও আউডির চারটি মডেলের গাড়ি পাওয়া যায়। বিশ্বের বেশির ভাগ বিলাসবহুল গাড়ির ব্র্যান্ড ইউরোপকেন্দ্রিক। তাই ইউরোর সঙ্গে টাকার মূল্যমান হিসেবে নির্ধারিত হয় বেশির ভাগ বিলাসবহুল গাড়ির দাম।

বিলাসবহুল গাড়িগুলো সাধারণত ২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন। তাই এসব গাড়ি আমদানি পর্যায়ে উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে দিতে হয় সম্পূরক শুল্ক।

মূলত ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসির ওপর শুল্কহার নির্ভর করে। ২০০১-৩০০০ সিসির গাড়ি আমদানিতে সব মিলিয়ে শুল্কভার প্রায় ৪৪২ শতাংশ। ৩ থেকে ৪ হাজার সিসির বেশি হলে এই শুল্কভার হয় ৮২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। তবে প্লাগ ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে এই শুল্কহার কিছুটা কম।

অর্থাৎ এই শুল্ককাঠামোতে একটি ৩০০০ সিসির বিলাসবহুল গাড়ির আমদানিমূল্য বা ট্যারিফ মূল যদি হয় ১ কোটি ২৫ লাখ। তাহলে এর সঙ্গে শুল্ক যোগ হবে প্রায় ৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গাড়ির দাম হয়ে যাবে প্রায় ৬ কোটি ৭৮ লাখ। এরপর অন্যান্য খরচের সঙ্গে লাভ হিসাব করে গাড়ি বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের গাড়ি আমদানিকারকেরা বলছেন, বাজারে রোলস-রয়েস বিভিন্ন মডেলের গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১২ কোটি কোটি টাকা। সে হিসাবে এটি বাংলাদেশের অন্যতম দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। এ ছাড়া বেন্টলির ফ্লায়িং স্পার মডেলের গাড়ি বিক্রি হয় ৮-১০ কোটি টাকা এবং বেন্টলির বেন্টায়গা মডেলের দাম ৫ কোটি টাকা মূল্য।

রেঞ্জ রোভার গাড়ি বিক্রি হয় ধরনভেদে ৬-৭ কোটি টাকা। আর ফেরারি গাড়ি ধরনভেদ বিক্রি হচ্ছে ১০ কোটি টাকার মধ্যে।

দেশে বর্তমানে আউডি গাড়ি মডেলভেদে পাওয়া যাচ্ছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ। আর বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনতে মডেলভেদে একজন ক্রেতাকে গুনতে হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা। আর মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি কিনতে খরচ করতে হবে সোয়া ১ কোটি টাকা থেকে ৪ কোটি টাকা।

র‍্যানকন মোটরসের মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের বিপণন শাখার প্রধান চৌধুরী মোহাম্মদ নাবিল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে বিলাসবহুল দামি গাড়ির ৫০ শতাংশই বৈদ্যুতিক গাড়ি। বৈদ্যুতিক গাড়িতে ক্রেতাদের আগ্রহী করতে আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ২১টি চার্জিং স্টেশন রয়েছে।

কারা কেনেন এসব গাড়ি
বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের প্রায় সিংহভাগ দেশের ধনী ব্যবসায়ী। ইদানীং বহুজাতিক কোম্পানির বড় কর্তারাও এখন বিলাসবহুল গাড়ি চালান। কিছু ক্ষেত্রে ধনী প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরাও এখন বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন। পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে অনেকে বিলাসবহুল গাড়িতে চড়েন।

দেশে জার্মান ব্র্যান্ডের আউডি গাড়ির আনুষ্ঠানিক পরিবেশক প্রোগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি লিড (বিপণন ও পরিচালন) তানজিলা তাসলিম বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশে বিলাসবহুল গাড়ির সম্ভাব্য ক্রেতা দেড় হাজারের বেশি নয়। দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে দেশে বছরে গড়ে ৩০০ বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি হয়। তবে গত দুই বছরে দেশে সব মিলিয়ে বছরে গড়ে ১৫০টির মতো বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি হয়েছে।’ প্রথম আলো




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD