রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন




মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা: শেখ হাসিনার মামলার রায় কবে, জানা যাবে আজ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:২৬ am
Prime Minister Sheikh Hasina Wazed প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Sheikh Hasina Prime Minister Bangladesh প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা Cabinet Secretary মন্ত্রিপরিষদ hasina pmhasina mp pm-hasina hasina hasina pm pm
file pic

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের তারিখ আজ ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৩ অক্টোবর এই দিন ধার্য করে আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের তারিখ ঘোষণা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব ও আনসার বাহিনী মোতায়েন থাকবে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েন চেয়ে সেনা সদরদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

প্রসিকিউশনের সূত্র থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন এ রায় ঘোষণা করা হতে পারে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দিন ধার্য করবেন।

প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের এটাই প্রথম কোনো মামলা। যার রায় ঘোষণার জন্য ধার্য আছে।

মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টাও করেছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা প্রসিকিউশনের মামলার বিচার শুনানি ও সাক্ষ্যপ্রমাণে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তি ও চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্যে জুলাইয়ের গণহত্যা, নৃশংসতা, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার গুম-খুনসহ নানা ভয়ংকর নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ট্রায়ালে যেসব সাক্ষ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা পৃথিবীর যে কোনো আদালতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছেন।

এদিকে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায় ঘোষণাকে ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওই দিনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের অপকর্ম ও নাশকতামূলক তৎপরতা পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ইতোমধ্যে রায় প্রদানকে ঘিরে সুপ্রিমকোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকা, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও বার ভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার অংশ হিসাবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এটিকে থ্রেড টু জাস্টিস মনে করি না। বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা এমনটা করছে। তিনি বলেন, আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দেবে। এর আগে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ ট্রাইব্যুনাল বা আদালত ফেস (মুখোমুখি) না করে রাস্তাঘাটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি মামলার বিচার চলছে। এই পাঁচ মামলার মধ্যে জুলাই হত্যাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড হিসাবে এক মামলার রায় হতে যাচ্ছে শিগগিরই। যেটির তারিখ ধার্য হবে আজ। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে চলতি বছর ২ জুলাই আদালত অবমাননার মামলায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। এটিই হাসিনার প্রথম সাজা। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে করা একটি মামলায়ও শেখ হাসিনার বিচার চলছে।

জুলাই আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ছাত্র-জনতার ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ দিনের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দেড় হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার।

১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্য দিয়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১০৩ দিনে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD