বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫১ অপরাহ্ন




সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩৬%, দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫ ৭:২৯ pm
দাম বাড়বে কমবে inflation food market খাদ্যপণ্য খাদ্য পণ্য মূল্যস্ফীতি
file pic

সেপ্টেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। আগের মাস আগস্টে তা কিছুটা নিম্নগামী হয়ে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছিল। এ মাসে দেশের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতের পণ্যেই দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সরকারের নানা উদ্যোগের পরও দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত মাসিক ভোক্তা মূল্য সূচকে (সিপিআই) মূল্যস্ফীতির এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সিপিআই তথ্য থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, গত সেপ্টেম্বরে তা কিনতে হয়েছে ১০৮ টাকা ৩৬ পয়সায়। এসব পণ্য গত আগস্টের তুলনায় বেশি দামে কিনতে হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। ধরা যাক, প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়, কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী মানুষের আয় না বাড়লে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে; কিংবা খাবার, কাপড়চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয়বৃদ্ধির হার কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। তখন প্রকৃত আয় কমে যায়।

গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। সে লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল গড় মূল্যস্ফীতিকে ৬.৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা। তবে, মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকায় এই অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসটিতে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেটি আগস্টেও ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় দেশের খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের মূল্যস্ফীতি আগের মাসেও ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশে। ভারতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক শূণ্য ৭, পাকিস্তানে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, আফগানিস্তানে ২ দশমিক ২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভূটানে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

সর্বশেষ এ মাসে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হয়েছে। এ মাসে শহরের তুলনায় গ্রামেই বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ সময় গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, শহর এলাকায় তা ৮ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।

এডিবি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সেই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেটিও হবে সর্বোচ্চ হার।

অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে মূল্যস্ফীতি এখনও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। বিপরীতে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে— কঠোর মুদ্রানীতি, কার্যকর বাজার তদারকি এবং উৎপাদন উৎসাহমূলক নীতি গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD