দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। সাক্ষাৎকারটির একটি অংশ তুলে ধরা হলো।
বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে যে বার্তা দিলেন তারেক রহমানবিএনপির মনোনয়ন নিয়ে যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান
আপনাকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখতে পাবো এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, আমার মনে হয় আপনি প্রথমদিকে বোধহয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম স্বাভাবিক আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সঙ্গে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক।
নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী হবে, জানালেন তারেক রহমাননির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী হবে, জানালেন তারেক রহমান
কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত এরকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে থাকতে পারবো না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশআল্লাহ থাকবো আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।
জুলাই আন্দোলনে নিজের ভূমিকা নিয়ে যা বললেন তারেক রহমানজুলাই আন্দোলনে নিজের ভূমিকা নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, না না সেটি তো নিব, কেন নিব না? অবশ্যই নিব।
বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে আমরা তারেক রহমানকে দেখতে পাব সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি?
এ বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।
বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কিভাবে করবে এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যদি অন্যায় করে থাকে, তবে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে, সেটি ব্যক্তি বা দল হোক। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে প্রবাসে আছি। তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় আমার ওপর যে শারীরিক নির্যাতন হয়েছিল, তার পরে চিকিৎসার জন্য এ দেশে আসি। আমি এখানে আসার সময় ছোট ভাইকে রেখে এসেছিলাম। আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। যে ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি, যে ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল, যে ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল, যে ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল সে ঘর রেখে এসেছিলাম।
‘সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যে সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম, সে মা এখন সুস্থ নেই।’
তিনি বলেছেন, আমার পরিবারের যে কাহিনি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম-এটিকে আপনারা কাহিনি বা সংগ্রাম যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার বা আমার পরিবারের কাহিনি নয়। এ রকম কাহিনি বাংলাদেশের শত (১০০) না, হাজার হাজার পরিবারের। এসব অন্যায়, হত্যা ও নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটি প্রতিশোধ নয়, এটা ন্যায় ও আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়।
তারেক রহমান বলেছেন, দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক।
তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা যারা বিএনপি করি, আমাদের রাজনৈতিক সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই-যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, জনগণ তাদের সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।
তিনি আরো বলেছেন, জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি সেহেতু জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। সবচেয়ে বড় বিচারক জনগণ।