রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন




শোলাকিয়ায় রেকর্ড সাত লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৪ ২:৩২ pm
eid jamat eid-jamat ঈদ জামাত ইস্তিসকার নামাজ ইতিকাফ রমজান রোজা sobe borat Shab e Barat namaz রজনী নিসফে শাবান‎ লাইলাতুল বরাত শা'বান মাস ইবাদত বন্দেগি শবে বরাত প্রার্থনা মুসলিম উম্মা মহিমান্বিত রাত শবে বরাত নফল ইবাদত কোরআন তেলাওয়াত জিকির-আসকার জিকির আসকার মোনাজাত ফজিলত ধর্মপ্রাণ মুসলমান শবে মেরাজ শবেমেরাজ ইসলাম islam eid e miladunnanabi Eid Milad un Nabi Rabi al awwal রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী Rabi al-Awwal eid মুহাম্মদ সা রবিউল আউয়াল ঈদ Baitul Mokarram bicycle salat বাইসাইকেল নামাজ সালাত salat বাইসাইকেল নামাজ সালাত rain Weather আবহাওয়া Rain বৃষ্টি Rain বৃষ্টি Sixty Dome Mosque ষাটগম্বুজ মসজিদ largest Eid congregation Sholakia eid শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
file pic

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে এবার রেকর্ড সাত লাখ মুসল্লি ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী এ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ভোর থেকেই শোলাকিয়া অভিমুখে মুসল্লিদের ঢল নামে। জামাত শুরু হওয়ার অন্তত দেড় ঘন্টা আগে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দান।

সকালের মিষ্টি রোদের তেজ একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে মুসল্লিদের দীর্ঘ সারি। সকাল ১০টায় যখন শোলাকিয়ায় এবারের ১৯৭তম জামাত শুরু হয়, তখন জনসমুদ্র ছাড়িয়ে যায় আশপাশের সড়ক ও অলিগলিসহ আবাসিক এলাকায়। লাখো কণ্ঠের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া ঈদগাহ এলাকা।

১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানে এবার ছিল ১৯৭তম ঈদ জামাত। জামাতকে কেন্দ্র করে এবার নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে স্থাপন করা হয় ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। ৭০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয় ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশ।

পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এবারো যুক্ত ছিল ড্রোন। বিজিবি, শতাধিক র‌্যাব এবং পুলিশের ১১১৬ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারের মতো সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ ময়দানে। এর আগে আরো অন্তত কয়েক দফা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাসি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের শুধু জায়নামাজ নিয়ে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়া হয়।

প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহে জায়নামাজ হাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে মুসল্লিরা সমবেত হন।

আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও শোলাকিয়া সেতুতে জায়গা করে নিয়ে জামাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন। সকাল ১০টায় সাত লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে জামাত শুরু হওয়ার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী ১৫, ৫ ও ১ মিনিট আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে নামাজের প্রস্তুতির সংকেত দেওয়া হয়। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এর পরিবর্তে এবারের ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করেন বিকল্প ইমাম শহরের বড়বাজার শাহাবুদ্দিন জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ।

এছাড়া জামাত শুরুর আগে বয়ান করেন বিকল্প ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। জামাত শেষে ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ তাঁর বয়ানে দেশ ও জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্য কামনা করেন। এছাড়া দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা, পাপ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর রহমত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন তিনি। প্রখর রোদে ঘামে ভেজা লাখো মুসল্লির উচ্চকিত হাত আর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আমীন, আমীন ধ্বনিতে এ সময় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ঈদগাহ এলাকা।

মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে ঈদের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারা দেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্রগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে।

এদের অনেকে ওঠেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। আবার অনেকেই কোথাও জায়গা না পেয়ে রাত কাটান জেলা সদরের বিভিন্ন মসজিদে। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চলাচল করেছে ২টি স্পেশাল ট্রেন। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে।

ঈদ জামাত শুরুর আগে ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বিপিএম-সেবা, পিপিএম (বার) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ মুসল্লিদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। আল্লাহর সান্নিধ্য ও অনুকম্পা পেতে ব্যাকুল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করেন ঈদের নামাজ। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলাকিয়া ছাড়েন তাঁরা।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD