বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থক প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে অপতথ্য প্রচারণা চালাচ্ছে। ভুয়া ছবি, বিকৃত ভিডিও, মিথ্যা তথ্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে কার্যকর পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করা, যাতে ভোটাররা তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং অপতথ্য দ্রুত শনাক্ত ও প্রতিহত করা যায়।
প্রথমত, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কৌশল হিসেবে ডিজিটাল মনিটরিং এবং তথ্য যাচাই ইউনিট গঠন অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক মাধ্যম, ওয়েবসাইট এবং সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়া তথ্য পর্যবেক্ষণ করে কোন কন্টেন্ট বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া তা শনাক্ত করা এবং তা জনসাধারণের জন্য প্রমাণসহ প্রকাশ করা প্রয়োজন। একটি স্বতন্ত্র মনিটরিং ইউনিট দলের অভ্যন্তরীণ তথ্য পরিবেশন স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল রাখে।
দ্বিতীয়ত, প্রতিটি প্রচারণা স্বচ্ছ ও প্রমাণভিত্তিক হওয়া উচিত। নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের উচিত যে কোনো মন্তব্য, পোস্ট বা প্রচারণা চালানোর আগে তথ্যের উৎস যাচাই করা। প্রমাণভিত্তিক কন্টেন্ট ভোটারদের আস্থা অর্জন করে, দলকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে এবং অপতথ্য প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তৃতীয়ত, দলের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ডিজিটাল শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। কর্মীদের শেখাতে হবে কিভাবে মিথ্যা তথ্য, বিকৃত ছবি বা ভিডিও চিহ্নিত করতে হয় এবং সঠিক তথ্যের মাধ্যমে জনমতকে সঠিকভাবে পথপ্রদর্শন করতে হয়। এছাড়া দলের অভ্যন্তরীণ নিয়ম ও নির্দেশিকা প্রতিটি কর্মীকে তথ্য ব্যবহার এবং প্রচারণায় দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করে।
চতুর্থত, বাহ্যিক কৌশল হিসেবে জনসাধারণ সচেতনতা মূলক কার্যক্রম অপরিহার্য। ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি রোধে গণমাধ্যম এবং মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত শিক্ষামূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। রাজনৈতিক দল যদি জনসাধারণকে তথ্য যাচাই এবং মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সতর্ক করে, তাহলে ভোটাররা নিজেদের সিদ্ধান্তের জন্য আরও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।
পঞ্চমত, নেতাদের উচিত দায়িত্বশীল, সংযত এবং প্রমাণভিত্তিক বক্তব্য প্রদান করা। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে না, বরং প্রমাণভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া উচিত। নেতাদের এমন আচরণ দলের সুনাম রক্ষা করে এবং অপতথ্য প্রচারণার প্রভাব কমায়।
পরিশেষে, অপতথ্য প্রতিরোধ কেবল সরকার বা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়; রাজনৈতিক দলগুলোরও সমান দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছ ও প্রযুক্তি-সচেতন অভ্যন্তরীণ কৌশল, জন সচেতনতা এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব মিলিয়ে নির্বাচনকে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং গণতান্ত্রিকভাবে দৃঢ় করা সম্ভব। ত্রয়োদশ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি অপরিহার্য।
লেখক: সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইআরএফ