রাজধানীতে দশের আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ‘রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৫’ শুরু হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত চার দিনব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করা হয়। আগামী ২৭ ডিসেম্বর মেলার পর্দা নামবে।
রিহ্যাব সভাপতি মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) চেয়ারম্যান মোছা. ফেরদৌসী বেগম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি আক্তার বিশ্বাসসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এ সময় রিহ্যাবের সাবেক ও বর্তমান নেতা, বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, একটি দশে গড়ে তুলতে ভবন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তা ও নির্মাণকারীরা গুরুত্বর্পূণ ভূমকিা পালন করনে। তিনি বলনে, আবাসন খাতে নানা পেশাজীবী সংগঠন যুক্ত থাকলেও বাস্তবে ভবন নির্মাণের মূল দায়িত্ব উদ্যোক্তা ও নির্মাতাদরেই।
রাজউক চেয়ারম্যান বলনে, “আজ যদি কোনো প্লট মালকিকে নিজের টাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে বলা হয়, তাহলে ঢাকা শহরে কয়টি ভবন আদৌ তৈরি হতো—তা ভাবনার বিষয় । র্দীঘদনি ধরে আবাসন খাত নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছে উল্লখে করে তিনি বলেন, বর্তমানে কিছুটা মন্দা থাকলেও এটি স্থায়ী নয়, সুদিন অবশ্যই ফিরে আসবে।
ডেভেলপারদরে বিষয়ে প্রচলতি ভুল ধারণার কথা তুলে ধরে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনেকে মনে করেন ডেলেপাররা শুধু নিজেদের ব্যবসার কথা ভাবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ,এই ধারণা সঠিক নয়। হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতিক্রম থাকতে পারেন, তবে সবাই একটি সুন্দর, পরিকল্পিত ও নিয়মের মধ্যে গড়ে ওঠা শহরই চান।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ) এর চেয়ারম্যান মোছা. ফেরদৌসী বেগম, নিয়ম অনুযায়ী ভবন তৈরির কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান। সদস্য এবং ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে এই ফেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট বলেন, “অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের ভাল জায়গায় সুন্দর একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকার আগ্রহ বাড়ছে। আমরা নাগরিকদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।
রিহ্যাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকৎ আলী ভুইয়া আবাসন খাতের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন নাগরিকের পক্ষে হাউজিং লোন ছাড়া ফ্ল্যাট বা প্লট ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব। ক্রেতারা যাতে খুব সহজে এই ঋণ পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করার জানি জানান তিনি। পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসস্থান তৈরিতে গৃহঋণের অবদান অনস্বীকার্য। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রিহ্যাবের পরিচালক ও মেলা কমিটির কো চেয়ারম্যান মিরাজ মোক্তাদির।
অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের ভাইস প্রসেডিন্টে-১ লায়ন এম.এ. আউয়াল (সাবেক এমপি), রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ এবং রিহ্যাব ফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আক্তার বিশ্বাস , ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ইঞ্জি. আব্দুল লতিফ, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী দেলোয়ার হোসেন, রিহ্যাব পরিচালক ও ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটির কো চেয়ারম্যান সুরুজ সরদার, রিহ্যাব পরিচালক ও প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লাবিব বিল্লাহ্সহ রিহ্যাব পরিচালকবৃন্দ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রিহ্যাব জানায়, এবারের মেলায় মোট ২২০টি স্টল রয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করছে ৪টি ডায়মন্ড স্পন্সর, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ১০টি কো-স্পন্সর, ১৪টি নির্মাণসামগ্রী প্রতিষ্ঠান এবং ১২টি আর্থিক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ড্যাপ (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) সংক্রান্ত জটিলতায় আবাসন খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত নতুন ড্যাপ এবং ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০২৫ আবাসন খাতে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আবাসন খাত কেবল মানুষের আবাসন চাহিদা পূরণেই সীমাবদ্ধ নয়; এই খাত সরকারের রাজস্ব আয়, বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রড, সিমেন্টসহ ২০০টির বেশি লিংকেজ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে নির্মাণ খাতের অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং এ খাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় ২ কোটি মানুষ।
তারা আরও জানান, রিহ্যাব ফেয়ার ক্রেতাদের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এক ছাদের নিচে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনাবেচা, গৃহঋণ সুবিধা, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এবং আধুনিক নির্মাণসামগ্রী সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ব্যস্ত জীবনে আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে তথ্য সংগ্রহের পরিবর্তে এই মেলা ক্রেতাদের সময় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করে।
মেলায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। প্রবেশ টিকিটের মূল্য সিঙ্গেল এন্ট্রির জন্য ৫০ টাকা এবং মাল্টিপল এন্ট্রির জন্য ১০০ টাকা। টিকিট বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ রিহ্যাবের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে। প্রতিদিন রাত ৯টায় র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।