সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন




বিষণ্নতায় দূর করে কোরআন তিলাওয়াত

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:২৭ am
Quran কোরআন কুরআন তিলাওয়াত আন্তর্জাতিক কেরাত ক্বিরাত সম্মেলন Hafez Saleh Ahmad Takreem হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিম International Qirat conference in the capital Dhaka
file pic

ডিপ্রেশন মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত ক্লান্তিকর এবং নিঃশেষকারী হতে পারে। আমাদের মধ্যে যারা প্রতিদিন এ ধরনের মানসিক অশান্তির মুখোমুখি হই, তাদের জন্য আশা আছে। ইসলাম মুমিনদের ডিপ্রেশন মোকাবেলা এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার দিয়েছে, যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার হলো পবিত্র কোরআন।
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) সঙ্গে একটি দৃঢ় এবং স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক মানসিক সুস্থতার দিকে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

এই সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে আল্লাহর প্রতি অপরিসীম বিশ্বাসের ভিত্তিতে- তাঁর পরিকল্পনা ও ইচ্ছার ওপর। আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসীদের কখনো ত্যাগ করেন না এবং যদি বিশ্বাসী আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) প্রতি পরম বিশ্বাস রাখেন, তবে আল্লাহ তাঁর জন্য যথেষ্ট।
যদি আপনি নিজেকে ডিপ্রেশনে ডুবে যেতে দেখেন, তবে কোরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করুন। অন্যান্য কারণের পাশাপাশি ডিপ্রেশন ও উদ্বেগের প্রধান কারণগুলোর একটি হলো ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং অজানা বিষয়ে ভয়।

জীবনের পরিস্থিতি বা ঘটনাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার অনুভূতি (যা-ই হোক না কেন) অস্থিরতা, নিঃসঙ্গতা ও হতাশা সৃষ্টি করতে পারে।
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এবং আল্লাহর বাণী বোঝার মাধ্যমে মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে কেবল আল্লাহই (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণকারী এবং তিনি আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি পরিকল্পনা রেখেছেন। আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটে, তা যত ছোটই হোক না কেন, তা আল্লাহর বড় এবং নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ। শেষ পর্যন্ত কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই; সব কিছু আল্লাহর হাতে।

তাহলে আমরা কেন হতাশ হবো? যখন আমরা জানি, আল্লাহ আমাদের দেখছেন এবং তিনিই সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
কোরআনে আল্লাহ বলেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য কোনো না কোনো উপায় বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন; নিশ্চয়ই প্রত্যেক বস্তুতে আল্লাহ একটি নির্ধারিত পরিমাণ স্থির করেছেন। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
কোরআন পাঠ করলে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী।

এই দুনিয়া মানুষের জন্য পরীক্ষা এবং বেদনাদায়ক ঘটনাবলির স্থান, যা শেষ হয়ে যাবে এবং একটি নতুন (স্থায়ী) জগৎ উদ্ভূত হবে- জান্নাত ও জাহান্নামের জগৎ। আল্লাহ এই পৃথিবীকে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করেন যাদের তিনি ভালোবাসেন এবং তিনি তাঁর বিশ্বস্ত বিশ্বাসীদের ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর পরিকল্পনার ওপর বিশ্বাস) নিয়ে এসব পরীক্ষা মোকাবেলা করার নির্দেশ দেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় পুরস্কার আসে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সঙ্গে। আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তিনি তাদের পরীক্ষা করেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)

এই জীবনের লক্ষ্যই হলো কষ্ট, ক্ষতি ও হতাশা। কেবল আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাসই আমাদেরকে এই দুনিয়ার পরীক্ষাগুলো সহ্য করতে এবং জান্নাতে চিরস্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীভূত থাকতে সাহায্য করতে পারে। কোরআনের তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমাদের অন্তর প্রশান্তি পায় এবং আমরা আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) অসংখ্য অনুগ্রহের কথা স্মরণ করি। ‘নিঃসন্দেহে, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। ’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সান্ত্বনা দেন যে আমরা এই পৃথিবীতে অসংখ্য কষ্টের সম্মুখীন হবো, কিন্তু প্রতিটি কষ্টের পরই প্রশান্তি আসবে। ‘সুতরাং নিশ্চয়ই, প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে আছে প্রশান্তি; নিশ্চিতভাবেই প্রতিটি কষ্টের সঙ্গে আছে প্রশান্তি। ’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)

পরিশেষে, এই দুনিয়ায় আমাদের ভাসিয়ে রাখতে পারে একমাত্র আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস। মূল বিষয় হলো আল্লাহর ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখা এবং তাঁর অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ওপর আস্থা রাখা যে তিনি জানেন আমাদের জন্য কী ভালো আর কী নয়। তিনি আমাদের সীমাহীনভাবে ভালোবাসেন এবং তিনি অপেক্ষা করেন যে আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করব, যাতে তিনি আমাদের সীমাহীনভাবে দান করতে পারেন-এই পৃথিবীতে এবং পরকালেও।

এই দুনিয়া এবং এর পরীক্ষাগুলো একমাত্র একটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে : আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) আমাদের কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করেন, যাতে আমরা তাঁর কাছেই শান্তি পাই। তিনি আমাদেরকে কঠিনতায় ফেলেন, যাতে আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করি। তিনি আমাদের পথে বিপর্যয় পাঠান, যাতে আমরা শুধু তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। তিনি চান তাঁর বান্দারা তাঁকে স্মরণ করুক, তাঁর কাছে ফিরে আসুক এবং এই দুনিয়ার প্রতিযোগিতায় হারিয়ে না যাক।

ইবন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমার বান্দার সন্তান, তোমার দাসীর সন্তান। আমার কপালের ভাগ্যদণ্ড তোমার হাতে, তোমার আদেশ আমার ব্যাপারে কার্যকর এবং তোমার সিদ্ধান্ত আমার ব্যাপারে ন্যায়সংগত। আমি তোমাকে তোমার প্রতিটি সুন্দর নামে ডাকি, যা তুমি নিজেকে দিয়ে বর্ণনা করেছ অথবা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির কাউকে শিখিয়েছ, অথবা তুমি যা অদৃশ্যের মধ্যে রেখেছ, কোরআনকে আমার অন্তরের প্রশান্তি, আমার বক্ষের আলো, আমার দুঃখ দূরকারী এবং আমার উদ্বেগ অপসারণকারী করো। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৩৭০৪)।

এই দোয়া আমাদের হৃদয় ও আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করতে একটি চমৎকার উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। ইসলামে সব সময় নিরাময়ের আশা আছে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) সব কিছু করতে সক্ষম এবং এমন কোনো গভীরতায় আপনি পৌঁছতে পারবেন না, যা তাঁর সাহায্যের বাইরে। ডিপ্রেশনের সমাধান আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বাণীতে এবং তাঁর অসীম প্রজ্ঞায় নিহিত : তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখুন, কারণ তিনি কখনো আপনাকে ত্যাগ করবেন না এবং তিনি সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।

IFM desk




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD