শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন




ঢাবি ক্যাম্পাসে হকার উচ্ছেদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১:৩৯ pm
Dhaka University TSC Teacher Student Centre tsc dhaka university public space public place Roads pavement public squares parks beaches square park beache Road পাবলিক প্লেস পাবলিক প্লেস পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত ঢাবি du ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিইউ Dhaka University শিক্ষক ছাত্র কেন্দ্র টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি
file pic

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে হকার ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শনিবার রাতে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের বিন নেছারীর নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে একদল ছাত্রনেতা ক্যাম্পাসজুড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান। কিন্তু এ অভিযানে দোকান ভাঙচুর ও দোকানিদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে বাম সংগঠন ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

শনিবার রাতেই উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন হকার ও ছোট খাবারের দোকানিরা। তারা অভিযোগ করেন, ২০–৩০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে দোকান করে জীবন চালাচ্ছি। আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ উচ্ছেদ করলে বাঁচব কেমন করে?। এই মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় বামপন্থী কয়েকজন নেতা-নেত্রীকে। তবে মিছিলে থাকা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেত্রী ইসরাত জাহানের (ইমু) সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।

দোকান কাদের হাতে
অভিযোগ রয়েছে এসব দোকানের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে মাদক, রাজনৈতিক আধিপত্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের। গতকাল প্রক্টর অফিসে দেখা যায় এমন চিত্র। ভ্রাম্যমাণ দোকানীর দোকান সরিয়ে দিতে বলা হলে এক কর্মকর্তার পরিচয় দিতে দেখা যায় ওই দোকানিকে। এ ঘটনায় সামনে আসে কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরে পচা মুরগির মাংস দিয়ে হালিম তৈরি করার অভিযোগের পর একটি দোকানে প্রশাসন তালা দিয়েছে।

২০২৪ সালের ১ নভেম্বর দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উদ্যান এলাকায় মাদক ব্যবসা করছে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি চক্র। এদের মধ্যে অন্যতম পারুলী, রেখা, ফিরোজ, নাসু। চক্রটির অনেকে দিনে ফুল বিক্রি করলেও আড়ালে বিক্রি করেন গাঁজা। ফুল বিক্রিকে একটি সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। দোকান থেকে চাঁদা আদায়কারী বাবু এবং হৃদয়ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। উদ্যানের নির্মাণাধীন সাতটি ‘ফুড কিওস্ক’—ক্যান্টিনে তাদের বসবাস; এখান থেকেই পরিচালিত হয় তাদের ব্যবসা।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেত্রী ইসরাত জাহান (ইমু) তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘একটা ছাত্রসংসদের সমাজসেবা সম্পাদক দৌড়ায়ে দৌড়ায়ে রাস্তায় সমবয়সী একজনকে থাপড়াইতেছে। দুই মিনিট দেখে বুঝলাম তার ফুডকার্ট ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, আর সে সেটা তুলে নিয়ে আবার দৌড়ায়ে পালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কার্ট নিতে দিবে না। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় মানবিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার শেখায়। ছাত্রসংসদের নেতারা গুণ্ডার মতো দৌড়ায়ে রাস্তায় মানুষ পিটানোর ক্ষমতা ও বৈধতা পায়—যদি তা জানতাম, ডাকসুর জন্য এতো আন্দোলন করতাম না।’

ঘটনার দিন ফেসবুকে পোস্ট দেন ডাকসুর সদস্য সর্বমিত্র চাকমা। তিনি লিখেছেন, ‘গত চারদিন ধরে আমার আর জুবায়ের ভাইয়ের (এবি জুবায়ের) ঘুম নেই। রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ঘুরে-ঘুরে অবৈধ দোকান, উদ্বাস্তু, ভবঘুরে উচ্ছেদ করলাম। বামেরা আজ উসকানি দিয়ে হকারদের নিয়ে আসছে, টিএসসি ঘুরে ভিসি চত্বর হয়ে ঘুরছে মিছিল নিয়ে। আমার গত চার দিনের পরিশ্রমের কোনো দাম নেই? প্রক্টরিয়াল বডির যারা আছে, ৯ মাস ধরে তাদের ওভারটাইম ডিউটির টাকা দেওয়া হয়নি—তাদের এই পরিশ্রমের দাম কোথায়?’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ, আপনরাই তো চেয়েছিলেন এই অবৈধ উচ্ছেদ, উদ্বাস্তু উচ্ছেদ। যারা উস্কানি দিয়ে হকারদের আপনার আমার ক্যাম্পাসে এসে স্লোগান দিচ্ছে—তাদের কী বলবেন? প্লিজ, চুপ থাকবেন না! উদ্বাস্তু ও অবৈধ দোকানদারের কর্মসংস্থানের দায়ভার আমার আপনার না; এটা পড়াশোনার জায়গা।’

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা শুধু অনিবন্ধিত ভ্রাম্যমাণ দোকান এবং ভবঘুরে উচ্ছেদ করছি। যারা ক্যাম্পাসে মাদকাসক্ত বা অপরাধে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তার দাবি, বহিরাগত টোকাই বা ছিন্নমূল শ্রেণির মধ্য থেকেই মাদককেন্দ্রিক অপরাধ বাড়ছে। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে এসব উপাদান সরানো জরুরি।

তবে একই অভিযানের সময় টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে জুবায়েরের সঙ্গে সাবেক শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি সেই ক্যাম্পাসে রক্ত দিয়েছি, আজ সেই জায়গায় ডাকসুর নেতাদের হাতে হুমকির শিকার হচ্ছি।’

এর জবাবে জুবায়ের নিজের ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আরশাদুল নামে এক এনসিপি নেতা অভিযানে বাধা দিয়েছিলেন। তিনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন; বাস্তবে আমি কাউকে মারিনি।’

ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক কায়েমও ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে কথিত হকারদের আড়ালে এক শক্তিশালী চক্র সক্রিয়। আওয়ামী আমলের পর সেই চক্র আবার মাথা তুলেছে। এই চক্রকে উৎখাত না করা পর্যন্ত আমরা থামব না।’

জিএস এস এম ফরহাদ ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বহিরাগত উচ্ছেদে যাদের পুরোনো মাদক ও অবৈধ অর্থ-লেনদেনের সিন্ডিকেট ভাঙছে, তারা আজ নতুন বয়ান হাজির করার চেষ্টা করেছে এবং মিছিলেরও আয়োজন করেছে। কথা একটাই—হয় ডাকসু থাকবে, নতুবা অবৈধ ব্যবসা-মাদক সিন্ডিকেট থাকবে; দুটো একসাথে চলতে দেবো না।’

এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্র কোথাও বলে না যে ডাকসুর নামে গুণ্ডামি জায়েজ! এসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।’

প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। তবে শুধু প্রক্টোরিয়াল টিমের পক্ষে একা এটা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও ছাত্রসমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ব্যতীত অন্য কারো মিছিল হবে না।’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD