কয়েক ডজনের বেশি ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির বিভিন্ন বনাঞ্চল; এখন পর্যন্ত সেখানে ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে উঠছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে, ফলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি এক বিবৃতিতে শনিবার জানানো হয়েছে, মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে প্রায় দুই ডজন মৃত্যুর পাশাপাশি ৯৭৯ জন দগ্ধ বা আহত হয়েছেন।
সর্বশেষ চিলির লা আরাউকানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে সরকার। তার আগে চিলির প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল রেখার মাঝ বরাবর বিওবিও ও নুবলে অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল।
রাজধানী সান্তিয়াগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যারোলিনা তোহা সাংবাদিকদের বলেন, চলমান আবহাওয়া পরিস্থিতি আগুন নেভানো কঠিন করে তুলছে, আগুন ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে এবং অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। শুক্রবার দেশটির বিভিন্ন স্থানে ৭৬ বার দাবানলের আগুন জ্বলে ওঠে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মে চিলির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। শনিবারও দেশটির বিভিন্ন এলাকার ১৬টি স্থানে আগুন জ্বলে উঠেছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা চিলির তিনটি অঞ্চলে অনেক কৃষি খামার রয়েছে। রপ্তানির জন্য বাণিজ্যিকভাবে আঙুর, আপেল ও বেরি উৎপাদিত হয় সেসব এলাকায়। বনভূমির বিস্তৃত অংশও রয়েছে সেখানে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলা সরকার চিলিকে উড়োজাহাজ, অগ্নিনির্বাপক বাহিনী ও সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে।
শুক্রবার লা আরাউকানিয়ায় জরুরি সহায়তার কাজে থাকা একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট এবং এক মেকানিকের মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকে আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার থেকে রাসায়নিক ফেলছে চিলির সরকার। উৎক্ষিপ্ত আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলি মানুষের চলাচলের পথ ছেয়ে ফেলছে; ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনও আগুন নেভাতে কাজ করছে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।
চিলি সরকার জানিয়েছে, দাবানলে শুক্রবার পর্যন্ত ৯৯ হাজার একর বনাঞ্চল পুড়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরের চেয়েও বড়।
জাতীয় বনায়ন সংস্থা কোনাফ জানিয়েছে, মোট ২৩১টি দাবানলের মধ্যে ৮০টি সক্রিয় রয়েছে, যেগুলোর বাগে আনার চেষ্টা করছেন দমকল কর্মীরা। বাকি ১৫১টি দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ৯০ শতাংশ দাবানল ১২ একরের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক নিজের গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমিয়ে শুক্রবার নুবলে ও বিওবিও এলাকায় যান। সেখাতে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিছু আগুন ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ লাগানো হতে পারে- এমন ইঙ্গিত দিলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি তিনি।