বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন




পীরগঞ্জে আখ চাষিরা গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ২:৩৫ pm
Dates date palm flowering plant trees sweetest fruits Khejur Khajoor খেজুর গাছ খেজুর রস খেজুরের খেজুর গাছ খেজুর রস date tree Gur date tree পাটালি ঝোলা গুড়
file pic

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার আখ চাষিরা চলতি মওসুমের শুরু থেকেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলায় আখ চাষে মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উপজেলার খালাশপীর, বড় আলমপুর, বড় ফলিয়া ও বাবনপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গুড় তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি আখ চাষি নিজেদের জমিতে কমবেশি আখের চাষ করে এবং তাদের আবাদি আখ থেকে গুড় তৈরি করে নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন।

শীত মৌসুমের শুরু থেকেই নিজেদের জমিতে চাষ করা আখগুলো মাড়াই ও গুড় তৈরির কাজ শুরু করেন। আখ চাষে লোকসান নয়, মুনাফার পরিমানই বেশি থাকে। গুড় তৈরি ও উৎপাদন কাজে এখানকার আখ চাষিরা অনেক এগিয়ে রয়েছেন। সবসময় ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করলেও অনেকেই আলু আটাসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য মিশিয়ে নিয়ে গুড় তৈরি করেন। বাহিরাগত অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে গুড় কিনে মজুদ করে থাকেন। মজুদকৃত গুড় মাটির তৈরি মটকা, মাটির পাতিল এবং হান্ডিতে মজুদ করে মুল্য বৃদ্ধির অপেক্ষায় থাকেন, বাজারমুল্য সুযোগ নিয়ে বছরব্যাপী ওই গুড় বিক্রি করেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলায় চলতি মওসুমে ১১২ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৩’শ ২০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। মওসুমের শুরুতেই কিছু কিছু আখচাষী চিনি কলে আখ বিক্রি করেন অবশিষ্ট চাষীরা আখ মাড়াই ও গুড় তৈরি করেন।

কয়েকটি গুড় তৈরির কাজে ব্যস্ত হোসেনপুর গ্রামের রফিকুল ইমলামের জানান, লাখ টাকা ব্যয় করে আখ মাড়াই ও গুড় তৈরি সামগ্রী কিনে নিজের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। নিজেদের জমির আখ থেকে গুড় তৈরির পাশাপাশি এলাকার চাষিদেরও গুড় তৈরি করছি। এক টিন আখের রস বাবদ তিনি কুড়ি টাকা দরে ক্রয় করেন চাষিদের কাছ থেকে। গুড় মাড়াই মওসুমে এক থেকে দেড় হাজার টাকা প্রতিদিন আয় করেন তিনি নিজের গুড় তৈরির কারখানা থেকে।

বড় আলমপুর এলাকার আখ চাষি সুজন মিয়া, রবিউল ও আরমান মিয়া জানান, তাদের এলাকায় অনেক দিন থেকেই আখ চাষের জনপ্রিয় এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। রংপুর চিনিকলের অবস্থা কাহিল হবার কারণেএলাকার চাষিরাও অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সময়মতো সুগার মিল কর্তৃপক্ষ আখ ক্রয় না করায় এবং আখ বিক্রির টাকা সময়মতো না পাওয়ায় অনেকেই আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আখ চাষি এলাকায় চিনির চেয়ে গুড়ের বেশি চাহিদা রয়েছে। চাষিদের বাড়ি বাড়ি এবং আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি তৈরি হয় গুড়ের তৈরি নানান ধরনের মুখরোচক খাবার। যে কারণে এ এলাকার জনপ্রিয় হয়ে উঠে গুড়। আর গুড় উৎপাদনের জন্য প্রায় চাষিরা কমবেশি জমিতে আখ চাষ করে থাকেন। আখ থেকে গুড় তৈরি করা হলে গুড়ের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ উত্তম জ্বালানিও পাওয়া যায়। সারা বছর প্রতিটি বাড়িতেই জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয় আখের উচ্ছিষ্টাংশ। এছাড়াও এখানকার আখ চাষিরা জানান, এলাকার চাষিরা সকলেই ভালো কারিগর। যে কারণে এখানে ভালো মানের আখের গুড় তৈরি হয়ে থাকে। আখের জমির পাশেই চুল্লি বসিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ গুড়ে সাধারনত কোন ভেজাল থাকে না। চিনি ও গুড়ের বাজার সমান হলে গুড়ে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করা হতো অধিকাংশ কারখানাগুলোতে। বর্তমানে চিনির দাম বেশী হওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। যার ফলে বর্তমানে প্রকৃত আখের রস থেকেই গুড় তৈরি করা হচ্ছে কারখানাগুলোতে। এতে গুড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সবমিলিয়ে আখচাষ বর্তমানে অনেক লাভজনক ফসল।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পীরগঞ্জে আখ চাষ বেশী হলেও দিনে দিনে আখ চাষ হ্রাস পাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে কৃষকের নিকট থেকে চিনিকলে আখ সংগ্রহ অভিযান আগের মতো নেই। এছাড়াও একই সময়ে অন্যান্য লাভজনক ফসল শাক-সবজি, রবিশস্য ও ভুট্টাচাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। তবুও উপজেলার কিছু এলাকায় গুড়ের চাহিদা থাকায় কিছু চাষি নিয়মিত আখ চাষ করছেন।

রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় চলতি মওসুমে ৪’শ ১০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৯’শ ৩৫ মেট্রিকটন। এরমধ্য রংপুর সদর উপজেলাসহ মিঠাপুকুরে ও পীরগঞ্জে আখ চাষ হলেও মেট্রোসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতে আখ চাষ হ্রাস পেয়েছে। (বাসস)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD