বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন




আদানির বিদ্যুৎ কিনে লোকসান ১৪ হাজার কোটি টাকা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৯:৫০ am
বিদ্যুৎ loadshedding energy crisis electricity power grid বিদ্যুত বিভ্রাট লোডশেডিং মেগাওয়াট power বিদ্যুৎ বিদ্যুত বিভ্রাট লোডশেডিং মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ loadshedding energy crisis electricity power grid বিদ্যুত বিভ্রাট লোডশেডিং মেগাওয়াট
file pic

ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনে বড় আর্থিক চাপে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র, এমনকি ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় গত দুই বছরে শুধু এই এক চুক্তিতেই পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরেই লোকসান দাঁড়ায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার বলেন, আদানির বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সরকারকে অবগত করা হয়েছে।

২০১৭ সালে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা এলাকায় অবস্থিত আদানির দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎ না নিলেও পিডিবিকে মাসে বিপুল অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ ও কয়লা—দুই ক্ষেত্রেই আদানির কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি দামে কিনছে বাংলাদেশ। ফলে গত তিন অর্থবছরে বিদ্যুৎ আমদানি করে পিডিবির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ কিনেই লোকসান হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

চুক্তি অনুযায়ী কোনো বিদ্যুৎ না কিনলেও পিডিবিকে প্রতিমাসে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৪৫০ কোটি টাকার বেশি দিতে হয়। শুধু গত দুই অর্থবছরেই বিদ্যুৎ আমদানি বাবদ আদানিকে বিল দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮০ কোটি ৩৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত আদানিকে পরিশোধ করা বিলের পরিমাণ কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

পিডিবির হিসাবে দেখা যায়, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ২২ টাকা হলেও গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক সব কেন্দ্রের তুলনায় আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি। দেশের ১৪০টির বেশি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও আদানির বিদ্যুতের দাম উঁচু।

পিডিবির নিজস্ব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ২৬ পয়সা, সরকারি অন্যান্য কেন্দ্রে ৭ টাকা ১৫ পয়সা, সব আইপিপিতে গড়ে ১৪ টাকা ৫৬ পয়সা এবং ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রে ৬ টাকা ৫২ পয়সা। ভারতের অন্যান্য কোম্পানি ও নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের খরচ প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৭১ পয়সা হলেও আদানিকে দিতে হচ্ছে প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৮৬ পয়সা। পিডিবির হিসাবে চলতি বছরে আদানির বিদ্যুতের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১৬ মার্কিন সেন্ট, যেখানে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের গড় মূল্য ছিল ১১ দশমিক ৩০ সেন্ট।

কয়লার দামেও বাড়তি বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র যেখানে প্রতি টন কয়লা কিনেছে ৭১ থেকে ৭৬ ডলারের মধ্যে, সেখানে আদানির কয়লার দাম দিতে হয়েছে প্রতি টন গড়ে ৭৬ দশমিক ৯১ ডলার।

আদানি অস্ট্রেলিয়ায় নিজস্ব কয়লা খনি থেকে গড্ডা কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে। এ কারণে চুক্তিতে কয়লার মূল্য নির্ধারণে নিউকেসেল ও এইচবিএ-২ ইনডেক্স ব্যবহার করা হয়েছে, যা নিয়ে পিডিবির সঙ্গে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ওই বিরোধের মীমাংসায় আদানি সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

আদানি গ্রুপের এক মুখপাত্র গত মাসে ইমেইলে জানান, তারা বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে চায়। তবে গত নভেম্বরের শেষে বিরোধপূর্ণ বিল ছাড়াও পিডিবির কাছে তাদের পাওনা ছিল ৩৫ কোটি ডলার। বকেয়ার কারণে একপর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হলেও পরে তিন কোটি ডলার পরিশোধ করলে সরবরাহ অব্যাহত থাকে।

বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও আদানি সরবরাহ করছে ১৬০০ মেগাওয়াট। হিসাব অনুযায়ী, শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবেই প্রতিবছর আদানিকে দিতে হচ্ছে ৩৩১ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার। ২৫ বছরের চুক্তি মেয়াদে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার, যা টাকায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি। তুলনামূলকভাবে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এ ধরনের চুক্তি দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আলোচনার মাধ্যমে কম দামে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সে জন্য পিডিবির সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত।

এদিকে অনলাইন পাওয়ার নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মধ্যপ্রদেশে টোরেন্ট পাওয়ারের সঙ্গে একটি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮২৯ রুপি, যা আদানির বিদ্যুতের দামের প্রায় অর্ধেক।
(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD