ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেছেন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ অবলোপন করতে হবে বা কমে যাবে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। এই মুহূর্তে আইএফআরএস’র ৯ ধারা বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০ শতাংশ রিটেন অফ (অবলোপন) করতে হবে। আমরা চাই, এটি বাস্তবায়ন করা হোক। তাহলে, ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।
সোমবার (২০ মার্চ) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়। সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ’র সভাপতি জিয়াউর রহমান। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা চাই, সব প্রতিষ্ঠান পূর্ণ আইএফআরএস ফলো করুক। বাংলাদেশে যদি এই মুহূর্তে আএফআরএস-৯ বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে ব্যাংকের ৪০ শতাংশ সম্পদ রিটেন অফ করে দিতে হবে। দ্যাট উইল রিফ্লেক্ট দ্য কারেক্ট ফিগার অব দ্য ব্যাংক।
মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, জনবল নিয়োগ দেওয়ার পর আমি প্রথম হাত দেবো ক্যাপিটাল মার্কেটে। আমি ক্যাপিটাল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার অবস্থা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে যদি ম্যানুপুলেশন হয়ে থাকে, তাহলে অনেক মার্জিনাল ইনভেস্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে অনেক কোম্পানির প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন (পিএমসআই) নেই। কিন্তু, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ছে।
এফআরসি‘র চেয়ারম্যান বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে সহজেই ঋণ পায়। কিন্তু, ক্যাপিটাল মার্কেটের হাজারো রেগুলেশনস এবং ডকুমেন্টেশনের কারণে কোম্পানিগুলো সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী নয়। এ সমস্যাগুলো এখনও আমাদের রয়ে গেছে। প্রাইভেট সেক্টরের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল মার্কেটে আনা আমাদের জন্য অনেক জরুরি। তাহলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নতি হবে। ক্যাপিটাল মার্কেটে আসার পরিপ্রেক্ষিতটাও চিন্তা করতে হবে। যখন একটি বড় কোম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটে আসবে, তখন তাদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ওনারশিপ থাকা দরকার। ইটস এ ডিসর্টরশন অব ক্যাপিটাল মার্কেট।
ইনস্টিটিউটশনাল ইনভেস্টর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইনস্টিটিউটশনাল ইনভেস্টররা আসলে অ্যাক্টিভ না। তারা আসলে শেয়ারের ব্যবসা করে। যদি তারা অ্যাক্টিভ হতো, ক্যাপিটাল মার্কেটে ম্যাসিভ ভূমিকা পালন করতে পারত। বিএসইসি যদি রেগুলেশন করত একটি কোম্পানি আইপিওতে আসলে ৩০ শতাংশ ওনারশিপ নিতে হবে ইনস্টিটিউটশনাল ইনভেস্টরকে। তখন তাদের থ্রেড অব টেকেন ওভার বাড়ত। আমাদের আসলে যেসব কোম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটে আছে, তাদের অধিকাংশই ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড। তাদের থ্রেড অব টেকেন ওভার নেই। এজন্যই এফআরসি গঠন করার মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু, এফআরসি এখানে খুব একটা ভালো ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
মো. হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আগামী ৩০ মে’র মধ্যে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নিবন্ধন নিতে হবে। অন্যথায় কোনো নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করতে পারবে না। এ পর্যন্ত এফআরসির তিনটি অর্জন রয়েছে। এর একটি হলো অডিটর এনলিস্টমেন্ট রুলস গেজেটেড হয়েছে। দ্বিতীয় হলো—পাই (জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান) এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা। তৃতীয়টি হলো—এফআরসির চাকরি প্রবিধানমালা গেজেটেড করা। এখন জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তা হয়ে গেলে নিরীক্ষকদের দেখভালে সক্ষম প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে এফআরসি।
এফআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাংলাদেশে ব্যাংকের অধীন সব ব্যাংক, সব ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটি কর্তৃক নিবন্ধিত সব এনজিওর আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করতে অবশ্যই এফআরসির নিবন্ধন পাওয়া নিরীক্ষক লাগবে। এফআরসির আওতায় আসবে ৫৫০০ কোম্পানির নিরীক্ষা ব্যবস্থা । এর মধ্যে থাকবে ৩৪০০ কোম্পানি ও ২০০০ এনজিও। আর্থিক বিধিমালা চূড়ান্ত হলে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে জালিয়াতি অনেকটাই কমে আসবে। কেউ অনিয়মের আশ্রয় নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বিধিমালার অধীনে সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।