বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন




মূল্যস্ফীতির তথ্য লুকিয়ে রেখে মানুষের কষ্ট কি চাপা রাখা যাবে?

লুৎফর রহমান
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ৩:১৯ pm
দাম বাড়বে কমবে inflation food market খাদ্যপণ্য খাদ্য পণ্য মূল্যস্ফীতি
file pic

অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে মূল্যস্ফীতি, জনসংখ্যা বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়বড়ে হিসাব হলে এটি যেমন দেশে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানান দেয় না, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার হালচালও জানা যায় না। এসব তথ্যে গরমিল রেখে শুধু হিসাবের অঙ্কে উন্নয়ন আর মানুষের হাসি মুখ দেখানোর চেষ্টাতে আসলে যে কারও কোনো লাভ নেই আমজনতাও তা ভালো বুঝে। তাই মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে বা লুকিয়ে না রেখে তা যথা সময়ে প্রকাশ করাই দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলকর। এই হিসাব জানতে পারলে মানুষ হয়তো তার আয়-ব্যয়ের একটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা জারি রাখতে পারে। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা রয়েছে তারাও তৎপর হতে পারে পরিস্থিতির উন্নয়নে

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দ্রব্যমূল্য বাড়বে এটা স্বাভাবিক। একইসঙ্গে অনেক সেবা ও সেবা পণ্যের মূল্যও জ্বালানির দামের সঙ্গে বেড়ে যায়। আগস্টে এক লাফে যখন জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হলো তখন থেকে ধারণা ছিল মূল্যস্ফীতির ঘর দুই অঙ্কে দাঁড়াতে পারে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি উস্কে দিয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে সরকারগুলো নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।

কেউ চেষ্টা করেও পারছে না। এমন অবস্থায় সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর দেশে মূল্যস্ফীতির কী অবস্থা সেটি জানা যাচ্ছে না নির্ধারিত সময়ের এক মাস পরও। পূর্ববর্তী মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য সাধারণত জানা যায়, পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহ বা কাছাকাছি সময়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই তথ্য সংগ্রহ করলেও তা প্রকাশ করে পরিকল্পনা কমিশন। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব সেপ্টেম্বর মাসেও প্রকাশ করা হয়নি। অক্টোবর মাসে এই হিসাবটি সামনে আনা হবে কিনা এটিও স্পষ্ট নয়। সংবাদ মাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী পরিসংখ্যান ব্যুরো নির্ধারিত সময়েই মূল্যস্ফীতির হিসাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত না থাকায় তা প্রকাশ করা হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো মূল্যস্ফীতির এই তথ্য লুকিয়ে রেখে কি লাভ? কার লাভ? এতে করে কি মানুষের কষ্ট চাপা রাখা যাবে? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তথ্য লুকিয়ে রাখার এই প্রবণতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। মূল্যস্ফীতির হিসাব সামনে না আসলে তা নিয়ন্ত্রণে যেমন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, তেমনি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য হারাবে।

মূল্যস্ফীতির এই তথ্য লুকিয়ে রাখার কি কারণ থাকতে পারে? হতে পারে সরকার এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। কারণ সরকার মনে করতে পারে পরবর্তী মাসে মূল্যস্ফীতি তূলনামূলকভাবে কম হবে। আগস্ট মাসের তথ্য হাতে রেখে পরবর্তী মাসের তথ্য এর সঙ্গে যোগ করে দুই মাসের গড় হিসাব প্রকাশ করলে হয়তো মূল্যস্ফীতির হার কমে যেতে পারে। এমনও হতে পারে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ইচ্ছে করেই কমানো হতে পারে। এতে আগের মাসের হিসাবে এর প্রভাব পড়বে। এমন সব ধারণা অনেকে করছেন। আদতে এমন চেষ্টা করে কেবল তথ্য লুকিয়ে রাখা যাবে কিন্তু বাস্তবতাকে ঢেকে রাখা সম্ভব না।

গত ২৮শে সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে। এই তথ্য সঠিক হলে সহজেই অনুমান করা যায় মূল্যস্ফীতির কারণে কতোটা চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি মানে হলো একজন নাগরিক তার বিদ্যমান মাসিক আয় দিয়ে আগের চেয়ে ১০ শতাংশ পণ্য এবং সেবা কম ক্রয় করতে পারবেন। ওই নাগরিকের আয় ১০ শতাংশ কমে গেছে এমনটিও ধরে নেয়া যায়। এই পরিমাণ মূল্যস্ফীতি প্রত্যেক নাগরিককেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। বছরের শুরু থেকে মূল্যস্ফীতি ছয় থেকে সাত শতাংশের ঘরে থাকলেও আগস্টে তা এক লাফে তিন শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়া। জ্বালানির দাম বাড়ানোর অজুহাতে অনেকে পণ্য ও সেবার মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাল, ডাল, তেলের মূল্য যেমন বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে শাক-সবজির দামও। এই দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা থেকে বাদ যায়নি গুঁড়ো সাবান, শ্যাম্পুর মতো প্রয়োজনীয় পণ্য। এসব পণ্যের উৎপাদনকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বরং বড় ধরনের সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে। তারা পণ্যের দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে এক লাফে। কারণ হিসেবে তারা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা বলছে। কিন্তু প্রতিযোগিতা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এসব পণ্যের দাম এত পরিমাণ বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রতিযোগিতা কমিশন দেশি-বিদেশি ৩৪টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর পরিচালিত। মামলার পর এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা কমিশনে তাদের বক্তব্য জমা দেয়া শুরু করেছে।

মামলা, ডাকাডাকি করে এইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কমিশন খুব বেশি কিছু করতে পারবে এমনটা অনেকেই মনে করেন না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে মূল্যবৃদ্ধি করে আসছে। তারা তাদের পণ্যের দাম নিজেরাই ঠিক করে। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যে তাদের পণ্য মূল্য ঠিক করে দেবে। সরকারের ট্যারিফ কমিশন কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। কিন্তু এই দাম নির্ধারণ করে দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। বলা হয়ে থাকে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়।

বহুজাতিক যেসব কোম্পানি ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তারাও খুব একটা পরোয়া করছে না সরকারি প্রতিষ্ঠানকে। এসব কোম্পানি অনিয়ম করলেও তার খবরাখবর খুব একটা প্রকাশ্যে আসে না। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর একটি বড় বহুজাতিক কোম্পানির বিভিন্ন পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয় সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলে। মূল্য বৃদ্ধির একটি তালিকা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলেও মূলধারার গণমাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ বা এ সংক্রান্ত খবর খুব একটা দেখা যায়নি। দু’একটা গণমাধ্যম দায়সারাভাবে কিছু সংবাদ প্রকাশ করে। মূলত সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার কারণেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্যারিফ কমিশন ও প্রতিযোগিতা কমিশন সরব হয়। অযৌক্তিকভাবে এমন প্রতিষ্ঠান পণ্যের দাম বাড়ানোর পর প্রতিযোগিতা কমিশন যে মামলা করেছে তাতে কোম্পানিগুলো হারলেও ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। লাভের লাভ হলো হয়তো সামনে তারা পণ্যের মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন।

আগস্টে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির তথ্য আসলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে দৃশ্যত বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে নির্ধারিত সংখ্যক মানুষকে স্বল্প দামে খাদ্য দেয়া হচ্ছে টিসিবি’র মাধ্যমে। এ ছাড়া স্বল্প দামে পণ্য দেয়ার আরও কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে সারা দেশে। এসব উদ্যোগ কিছু মানুষের জন্য সুবিধা হবে। কিন্তু দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির যে চাপ তা কমাতে সবার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এটি হতে পারে খাদ্য পণ্যের দাম কমানো। শুল্ক ও কর কমানো এবং প্রয়োজনে অতি প্রয়োজনীয় পণ্যে ভর্তুকি দেয়া। হাল সময়ে এই ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তা লাঘব করতে সরকার শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তাতে নতুন করে আর তেলের দাম বাড়েনি। সরকার যে সময়ের জন্য শুল্ক কমিয়েছিল তার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এই মেয়াদ যদি আর বাড়ানো না হয় তাহলে সামনে ভোজ্য তেলের দাম নতুন করে বাড়বে এমন আশঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কঠিন এক ঘূর্ণিপাকে পড়েছে মানুষ। সীমিত আয়ের মানুষ নানা কৌশলে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। অনেকে খাবার-দাবারে কাটছাঁট করছেন। অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য ছাড়া বিলাসী পণ্য কেনাকাটা বাদ দিচ্ছেন। ছেলেমেয়ের শিক্ষা ব্যয়ে কাটছাঁট করছেন। রাজধানীতে থাকেন এমন অনেকে জীবন যাত্রার ব্যয় সামলাতে না পেরে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এক সময় রিকশায় করে অফিসে যাওয়া মানুষরা এখন হেঁটে যাচ্ছেন ১০-২০ টাকা বাঁচানোর জন্য। সন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনা কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে। পারিবারিক বিনোদন, অনুষ্ঠান আয়োজনে লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

এমন সব মানুষের জন্য সামনে কেউ কোনো আশার বাণী শোনাতে পারছেন না। এমন কোনো উদ্যোগ নেই যাতে তারা আশাবাদী হতে পারে। সামনে কেমন সময় আসছে তাও বলা যাচ্ছে না। এভাবে টানাটানি করে মানুষের জীবন চলতে থাকলে দিনে দিনে গরিব মানুষ আরও গরিব হয়ে পড়বে। অতি গরিব মানুষ একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাবে। আর এটি হলে সব চেয়ে বড় বিপদ হবে সহস্রাব্ধ লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন, মধ্য আয়ের দেশ হওয়া বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস যে তথ্য দেয় তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। গত মার্চে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক প্রতিবেদনে জানায় বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে প্রকৃত হার তার চেয়ে বেশি। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিবিএস পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জানুয়ারি মাসে ৫.৮৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হিসাব দেয়। কিন্তু সানেম শহর এলাকার চার শ্রেণির মানুষের জীবন মানের তথ্য হিসাব করে ১১.৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির তথ্য পায়। গ্রামে এই হার ১১.২১ শতাংশ। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের হিসাবে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২.৪৭ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে হয়েছে ১২.১০ শতাংশ। সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। বিবিএস পুরনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সানেম মনে করে মূল্যস্ফীতির ফলে মানুষের আয়ের প্রধান অংশ যখন খাদ্যের পেছনে খরচ হয়। তখন মানসম্মত আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনের পেছনে খরচ কমে যায়।

শুধু মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়েই যে লুকোচুরি তা কিন্তু নয়। এর আগে জনশুমারি ২০২২ এর প্রাথমিক তথ্য নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। দেশের মোট জনসংখ্যার যে হিসাব জনশুমারির ফলে উঠে এসেছে তা প্রকৃত হিসাবের চেয়ে কম বলে অনেকে মতামত দেন। তখন বলা হয়, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে দেখাতে জনসংখ্যার হিসাবটি কম এসেছে। জনসংখ্যার হিসাবের সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র হিসাবও গড়বড়ে বলে অনেকে মনে করেন। কারণ সরকার জিডিপি’র যে হিসাব দেয় বিভিন্ন দেশি- বিদেশি সংস্থার হিসাব তার চেয়ে সব সময়ই কম থাকে।

অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে মূল্যস্ফীতি, জনসংখ্যা বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়বড়ে হিসাব হলে এটি যেমন দেশে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানান দেয় না, তেমনি সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার হালচালও জানা যায় না। এসব তথ্যে গরমিল রেখে শুধু হিসাবের অঙ্কে উন্নয়ন আর মানুষের হাসি মুখ দেখানোর চেষ্টাতে আসলে যে কারও কোনো লাভ নেই আমজনতাও তা ভালো বুঝে। তাই মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে বা লুকিয়ে না রেখে তা যথাসময়ে প্রকাশ করাই দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলকর। এই হিসাব জানতে পারলে মানুষ হয়তো তার আয়-ব্যয়ের একটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা জারি রাখতে পারে। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা রয়েছে তারাও তৎপর হতে পারে পরিস্থিতির উন্নয়নে।

লেখক: মানবজমিনের নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD