প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নতুন উদ্বোধন হওয়া সেতু দুটি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাপকভাবে জোরদার করবে। তিনি যখনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন এবং আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। এটাই আওয়ামী লীগের ইতিহাস। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ।
সোমবার দুপুরে নড়াইলে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেন বিশিষ্ট মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতুর উদ্বোধনকালে ভাষণে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার সরকারে এসেই যমুনা সেতুর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে তাঁর সরকার। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করে। যার মধ্যে রয়েছে ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব নদীর ওপরও সেতু নির্মাণ। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা। এখন আমরা দাবি করতে পারি দেশের সমগ্র এলাকার মাঝেই যেন যোগাযোগ স্থাপিত হয় সে কাজ আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথমে কালনা সেতু হিসেবে বর্তমান মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেও এটা যেহেতু মধুমতি নদীর ওপরে নির্মিত এবং মধুমতি নামটিও অনেক মিষ্টি তাই এটার নাম মধুমতি সেতু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদকারী নাসিম ওসমানের নামে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নামকরণ করেছেন। ইতোপূর্বে তাঁর সরকার নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর আরো দুটি সেতু এবং মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সাথে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমাদের ঐসব অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরো উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পথ পরিক্রমায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক হাইওয়ের সাথে যুক্ত হলে আমাদের চট্টগ্রাম এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর একটি আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।
তিনি এই সেতু দু’টি নির্মাণে সহযোগিতার জন্য আমাদের বন্ধু প্রতীম দেশ জাপান এবং সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার, ইনশাল্লাহ আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ সেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই এগিয়ে যাবে। এ সময় করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাঞ্জা এবং পাল্টা নিষেধাঞ্জার পরিক্ষেতিতে সবাইকে সাশ্রয়ী হবার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমগ্র দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রেখে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বই আজকে কষ্ট ভোগ করছে। সে জন্য আমাদের আবেদন থাকবে-আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। এই যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে বা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সে অর্থ সমগ্র বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং উন্নত জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক, সেটাই বিশ্ববাসীর কাছে আমি আহবান জানাই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমরা সকলে মিলে নিরলস পরিশ্রম করে যাবো, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান। সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। সেতু প্রকল্পের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।