আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়াকে চারিত্রিক সনদ পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
তিনি বলেছেন, আইএমএফের ঋণ চারিত্রিক সনদের মতো। এ সনদ পেলে সবাই আমাদের ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রাঙ্গুলার কো-অপারেশন: ট্যাপিং নিউ অপরচ্যুনেটিস শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউএনডিপি। নলেজ ফর ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ড. মসিউর রহমান বলেন, আইএমএফের ঋণ পাওয়া মানেই চারিত্রিক সনদের মতো। অর্থাৎ আগে যেমন কোনো গেজেটেড কর্মকর্তার কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ নিতে হতো, না চিনলেও তিনি বলে দিতেন ‘তাহার চরিত্র ভালো, কোন দিন দুষ্টুমি করেন নাই’- ইত্যাদি ইত্যাদি। একইভাবে বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ ঋণ দিলে সেটি কোনো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হওয়াকে বোঝায়। এটি হলে অন্য দেশ বা সংস্থাও তখন ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করবে সহজেই। একই সঙ্গে বিনিয়োগও আসবে।
তিনি বলেন, রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়া নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছিল। তবে এখন অনেক পণ্যের দাম কমেছে। সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না। শিগগির সংকট কেটে যাবে।
ড. মসিউর আরও বলেন, দক্ষিণ জোনে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে বিনিময় মুদ্রা। একক কোনো মুদ্রা থাকলে ভালো হতো।
ইআরডি সচিব শরিফা খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএন রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর গুয়েন লুইস এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের সিইও অ্যান্ড চেয়ারম্যান এম. মাশরুর রিয়াজ এবং রিসার্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. এম, এ, রাজ্জাক।
এম. মাশরুর রিয়াজ বলেন, নলেজ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ জোনে সহযোগিতার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প সমস্যায় পড়বে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
এম, এ, রাজ্জাক বলেন, দক্ষিণে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নলেজ শেয়ারিংয়ের অভাব, আমদানি-রপ্তানির মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা, রপ্তানিপণ্য বহুমুখীকরণ না হওয়া, কানেক্টিভিটি জোরদারকরণ, এলডিসি উত্তরণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী অবস্থায় দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলোর পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ফয়জুল ইসলাম ও ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনিন আহমেদ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত চীন ও ভারতে রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।