প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াই যেতে পারেনি বিটিসিএল
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশে ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ৪জি নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা এবং ৫জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার ১৪ মাস পার হলেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন লিমিটেড (বিটিসিএল)।
প্রকল্পের অগ্রগতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এরই মধ্যে ওই দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। পরামর্শক নিয়োগ না করে একটি বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই লিখিত অভিযোগে।
২০২২ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য পরামর্শক নিয়োগের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মনজির আহম্মেদ বলেন, বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পের কাজ চলমান।
বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার তৎপরতার বিষয়ে তিনি বলেন, তাড়াহুড়া করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে না। অপটিক্যাল ফাইবার কেনা হয়ে থাকে খুলনার একটি কোম্পানি থেকে। সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর বিটিসিএলও সরকারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে টেলিযোগাযোগ কাঠামো আধুনিকীকরণসহ উচ্চমানের ট্রান্সমিশন সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার বিষয় মাথায় রেখেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
ইন্টারনেট গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও গত দেড় বছরে কাজ শুরু করতে না পারায় ব্যবহারকারীরা আধুনিক সুবিধা বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পের কাজের ব্যাপকতা বিবেচনায় কাজের মান রক্ষার্থে সার্ভে, ডিজাইন, সুপারভিশন ও মনিটরিং কাজের জন্য ডিপিপিতে পরামর্শকের প্রস্তাব থাকলেও তা নিয়োগ করা হয়নি। পরামর্শক নিয়োগ না করে একটি বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্যে। এই বিশেষ কোনো কোম্পানিকে কাজ দিলে সরকারের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রকল্পটি যে উদ্দেশ্যে করার জন্য নেওয়া হয়েছিল সেটিও থমকে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
বেসরকারি ওই সংগঠনটি আরও বলছে, বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে হবে। তথ্য প্রবাহে প্রতিযোগিতার কারণে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ মাধ্যম আইসিটিভিত্তিক আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধিতে একটি প্রধান অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। শ্রমভিত্তিক অর্থনীতি থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ মাধ্যমের কানেকটিভিটি, নির্ভরযোগ্যতা, ব্যান্ডউইথ এবং ল্যাটেন্সি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে, যা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) দেশের মোট তথ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ বহন করে থাকে।
সংগঠনটির দাবি, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর বিটিসিএলের বর্তমান অপটিকাল ফাইবার কেবল (ওএফসি) নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। এ কারণে আলোচ্য নেটওয়ার্কের যেকোনো দুর্বলতার কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বর্তমানে বিটিসিএলের সমস্ত নেটওয়ার্ক সিই ব্যান্ড প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে করা, যা পুরোনো প্রযুক্তি এবং যা ৫জি যুগের জন্য যুগোপযোগী নয়। বিটিসিএল ট্রান্সমিশন আপগ্রেড করতে হবে এবং এই প্রকল্পটি ৫এ যুগে অন্যান্য সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি খাত ব্যবহার করবে এবং এই প্রকল্পটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুবিধা। পুরোনো প্রযুক্তির জন্য প্রকল্প নেওয়া সরকারি টাকার অপচয়।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্মসচিব মো. আবদুর রব বলেন, ‘প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে জানা নেই।’বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্প চলমান। এরই মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে মূল্যায়ান পর্যায়ে রয়েছে। টেন্ডার মূল্যায়ানের কাজ শেষ না হলে কোন কোম্পানি কাজ পাবে সেটা বলা যাচ্ছে না।’ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব-উল-আলম বলেন, ‘এই কাজে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, সেটা আমি জানি না।’ {ঢাকা টাইমস}