সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন




ব্যাংকিং পেশায় বাড়ছে নারী কর্মীর সংখ্যা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৭:২৬ pm
Sanjida Islam Choya Bangladeshi student BBC 100 inspiring women বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় বাংলাদেশের সানজিদা
file pic

সামাজিক স্বীকৃতি, নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ, চাকরির নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ভালো বেতন কাঠামোর কারণে ব্যাংকিং পেশায় বাড়ছে নারী কর্মীর সংখ্যা। শুধু চাকরিই করছেন তা নয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে বসে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এক সময় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ১০ শতাংশের নিচে। এখন তা ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে দেশের ৬১টি ব্যাংকে জনবল রয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৬ জন। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৬৭ জন। ২০২২ সালের একই সময় নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৫৪৮। ২০২১ সালের জুনে ছিল ২৯ হাজার ৭৭১ জন।

বর্তমানে ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার হার ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, ২০২২ সালের জুনে ছিল ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ব্যাংকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবেও নারীদের দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হুমায়রা আজম। তিনি বর্তমানে একমাত্র নারী এমডি। মিডল্যান্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন নিলুফার জাফরুল্লাহ।

ব্যাংকিং পেশায় নারীদের আগ্রহ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বেসরকারি এবি ব্যাংকে কর্মরত সিনিয়র রিলেশনশিপ ম্যানেজার (এসএভিপি) দিলরুবা স্মৃতি বলেন, ব্যাংকের চাকরিতে শুধু নারীরা নয়, সবাই আগ্রহী। কারণ বেসরকারি খাতে যেসব চাকরির সুযোগ রয়েছে তার মধ্যে ব্যাংকের চাকরিতে নিরাপত্তা একটু বেশি, এটাই ধরে নেওয়া যায়। সামাজিক অবস্থানে গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। দেশে যেসব চাকরিকে মর্যাদাপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয় তার মধ্যে ব্যাংকিং জব অন্যতম। ব্যাংকে নারীদের কাজ করার পরিবেশ যেমন ভালো তেমনই ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও রয়েছে। যা একজন নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে যেকোনো বিষয় পড়ালেখা করেও ব্যাংকে ক্যারিয়ার গঠন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ, চাকরির নিরাপত্তা ও ভালো বেতন কাঠামোর কারণে নারীরা ব্যাংকিং পেশায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ কারণেই ব্যাংকিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরা এখন শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরিসহ বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের চাকরিতে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। একটি সময় এসব ক্ষেত্রে নারীর অংশ ছিল খুব কম। যে কারণে এখন ব্যাংকের ৫০ বছরের বেশি বয়সী কর্মীর মধ্যে নারী ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের মধ্যে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এ হার ৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকে যারা ক্যারিয়ার শুরু করছেন, তাদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী। ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, ব্যাংক খাত বড় হচ্ছে ফলে এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারীরা এগিয়ে আসছেন। তাদের দক্ষতা বেড়েছে। প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করছেন। ব্যাংকগুলোও তাদের জন্য কর্ম-পরিবেশ তৈরি করেছে। আগামীতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নারীরা কাজের প্রতি মনোযোগী হয়ে থাকেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন, তাদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ বেশি। ফলে এখন নীতি নির্ধারণী থেকে শুরু করে ব্যাংকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও ব্যাংক পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে পরিচালনা পর্ষদ। সেখানে নারীর উপস্থিতি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের পর্ষদে নারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি। বেসরকারি ব্যাংকে পরিচালক পর্ষদে নারীদের উপস্থিতি ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ হলেও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে তা ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে এ হার ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সরকার গত বছরের ডিসেম্বরে রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করে। সেখানে বলা হয়, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এছাড়া, সরকারের শেয়ার রয়েছে, এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

দেশে কার্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে নারী কর্মীদের হয়রানি বন্ধে সব ব্যাংক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছে ৬০টি ব্যাংক। সব ব্যাংকের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্যাংকে নিজস্ব পরিবহন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ৩৬টি ব্যাংকে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবা-যত্ন স্থাপন করেছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নের ১৭টি অভীষ্টের পঞ্চম হচ্ছে লৈঙ্গিক সমতা। এ সমতা সূচকে ওয়ার্ল্ড ইকোনিক ফোরামের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৯তম।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লৈঙ্গিক সমতা জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD