প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় একক মাস হিসেবে আবারও পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ওই মাসে রপ্তানি আগের বছরের একই মাসের চেয়ে বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
এ নিয়ে টানা তিন মাসে একক মাসে রপ্তানি আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়েছে। এর আগের মাস জানুয়ারিতে রেকর্ড ৫৭২ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য বিদেশে বিক্রি করা হয়েছিল। ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৫৩০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫১৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের। আগের অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৪৬৩ কোটি ডলারের। অর্থাৎ ৫৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১২ দশমিক ০৪ শতাংশ বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারির প্রবৃদ্ধিতে ভর করে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রপ্তানিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়ে প্রায় পৌনে ৪ শতাংশ হয়েছে।
এ সময়ে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ৭০৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এ হিসাবে বেড়েছে ১৩৭ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বলছে, উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি হলেও একক মাসের হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে সরকার নির্ধারিত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত মাসে ৫২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আয়ের পরিমাণ কম শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ।
আট মাসের হিসাবেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি রপ্তানিতে। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল বাংলাদেশ। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ১১১ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় এসেছে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৩ হাজার ১৩৬ কোটি ১৮ লাখ ডলার ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি আয়ের এই চাঙ্গাভাব দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো, এবং ডলার বাজারের অস্থিতিশীলতা দূর করার সহায়ক হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি– বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পোশাক খাতের রপ্তানিতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত এক বছরে গ্যাস ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, বিশ্ব অর্থনীতির মন্থর অবস্থায় বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমার মতোন নানামুখী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। এই অবস্থায় আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আরো বাড়বে বলে আশা করছি। কারণ বেশিরভাগ ক্রেতা ব্র্যান্ডই তাদের পণ্য মজুত শেষ করে ফেলেছে।”
বাংলাদেশের কারখানাগুলোও এখন ম্যান-মেইড ফাইবারের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে, যা এই ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহযোগিতা করছে’- তিনি আরো বলেন। তবে পোশাক কারখানাগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না পাওয়া এখনও বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
গত অর্থবছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত টানা তিন মাস ৫০০ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানির রেকর্ড করে বাংলাদেশ। এই বছরের জানুয়ারিতে ৫৭২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা এপর্যন্ত এক মাসের হওয়া সর্বোচ্চ রপ্তানি। তার আগে ডিসেম্বরে ৫৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়।