ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর নাবিকদের জিম্মি হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে ‘অতি গুরুত্ব’ দেওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনার উদ্যোগ বিষয়ে প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “ বাংলাদেশের টেলিভিশনে কি দেখাচ্ছে, কি হচ্ছে সেটা কিন্তু যারা হাইজ্যাক করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে।
“ যখন এই বিষয়টাকে অতিগুরুত্ব দেওয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাকারদের অবস্থান আরো অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এই নেগেটিভ ইম্পেক্টটা হচ্ছে।”
বিষয়টিকে সবারই সতর্কভাবে দেখা দরকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য তো নাবিকদের এবং জাহাজটাকে মুক্ত করা। সুতরাং আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীলভাবে যদি আচরণ করি তাহলে এই পরিস্থিতি উত্তরণ সহজ হবে।
“এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে, অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১০০ দিনের মাথায় একই কোম্পানির জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভবপর হয়েছিল। এখনো আমরা আশা করছি আমাদের যে সমন্বিত প্রচেষ্টা আছে, সুস্থভাবে নাবিকদেরকে ও জাহাজটাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব।”
গত মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।
জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল।
জাহাজটি অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেয়ার পর সোমালি উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। বৃহস্পতিবার সেখানে পৌঁছার পর শুক্রবার আবার জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করা হয়।
নাগরিকত্ব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়
ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তার কাছে প্রশ্ন ছিল, ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী?
জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “এটি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। যেহেতু বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশি দেশ, সেই হিসেবে আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি।”
যুক্তরাষ্ট্র আবারো বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমত থাকতেই পারে। যেকোন দেশের ভিন্নমতকে আমরা সম্মান করি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমাদের সাথে ভবিষ্যতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।
“পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সম্পর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। সুতরাং আমাদের বিবেচনায় আমাদের এই অঞ্চলের নিরিখে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যেটি বলেছে, বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে তারা কাজ করছে, আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্টতর করার জন্য এবং আমাদের যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক, সেটিকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে কাজ করছি।”
রমজান কিংবা ঈদ উপলক্ষে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, অসাধু ব্যবসায়িরা যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, মানুষ এ ব্যাপারে আগের তুলনায় অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। অহেতুক দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করার ক্ষেত্রে মানুষের সোচ্চার হওয়াটা সহায়ক।
“একই পণ্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে যে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা চাই।”