বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন




বরেন্দ্র অঞ্চল

পানিস্তর অস্বাভাবিক নিচে, তীব্র সংকট

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:৩৫ am
water পানি দিবস Drink hydrosphere food energy পানি জল বারি সলিল নীর বারিমণ্ডল shallow tube well শ্যালো টিউবওয়েল গভীর নলকূপ চাপকল তারাপাম্প ভূগর্ভস্থ পানি অগভীর নলকূপ
file pic

রাজশাহী জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোয় পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে তপ্ত-উত্তপ্ত বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এ অঞ্চলের কোথাও টিউবওয়েলে (হস্তচালিত নলকূপ) এক ফোঁটা পানিও উঠছে না। চলমান তাপপ্রবাহ ও তীব্র খরার মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে অবস্থান করায় পানি নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশেষ পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘বাঘা-চারঘাট এলাকায় পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে মানুষের। পানিস্তর দ্রুত নেমে যাওয়ার এটা বড় কারণ বলে আমার মনে হচ্ছে। এরপরও গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে। অতিরিক্ত পুকুর খনন করে গভীর নলকূপ বসিয়ে পুকুরে পানি ভরা হচ্ছে। তার পোস্টে কয়েকশ মানুষ মন্তব্য করেছে। তারাও নিজ নিজ এলাকার পানি সংকটের কথা তুলে ধরেছেন।

বিভাগীয় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পানির চাহিদা মেটাতে আশি ও নব্বইয়ের দশকে রাজশাহী অঞ্চলের জনপদে হাজার হাজার হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়। এমন কয়েক লক্ষাধিক হস্তচালিত নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ এখন প্রায় পরিত্যক্ত। সংকট মেটাতে গ্রামাঞ্চলে সাবমারসিবল পাম্প বরাদ্দ ও স্থাপন করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জল মোটর দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই নিজের টাকায় জল মোটর স্থাপন করছে।

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে উচ্চক্ষমতার পানির পাম্প রয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে ৬ হাজারের বেশি সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে। নগরীতে থাকা হস্তচালিত নলকূপগুলো থেকে পানি পাচ্ছে না নগরবাসী। অন্যদিকে গ্রাম জনপদে থাকা কোনো হস্তচালিত নলকূপেও পানি উঠছে না।

তানোরের মন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান জানান, শুষ্ক মৌসুমে বরেন্দ্র এলাকায় পানির সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে এলাকার মানুষের পানির প্রাপ্তির প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ ও পুকুর। তাও লোকজনকে অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পানি সংগ্রহের কষ্টটাই এখন এলাকার মানুষের কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের জনপদে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এমনটা দেখা যাচ্ছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। দুই সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ঊর্ধ্বে ৪০ এবং নিম্নে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এ সময়ে বরেন্দ্রভূমির মাঠঘাট, পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে গেছে।

পানি গবেষণা সংস্থা ওয়ারপোর প্রতিবেদন অনুসারে রাজশাহীর পাঁচন্দর ইউনিয়ন হলো দেশের সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকা। এ এলাকায় পানির সংকটও বেশি। এলাকার বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, পানি সংকটে গরু-বাছুর পালন করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ১৫০ ফুট বোরিং করেও টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার পুকুর-জলাশয়েও পানি নেই। আর খাওয়ার পানির কষ্ট আরও বেশি। যখন বিদ্যুৎ থাকে তখন বিএমডিএর গভীর নলকূপ চালু হয়। তখন পানি সংগ্রহ করতে গ্রামবাসী কলস-বালতি-গামলা নিয়ে ভিড় করেন। গ্রামের শতাধিক পরিবারকে কাড়াকাড়ি করে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এ এক অসহনীয় কষ্ট।

তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার মাহালিপাড়ার বাসিন্দা আদিবাসী ফিলিপ টুডু বলেন, অনেক মানুষ নিজের পয়সায় সাবমারসিবল বসিয়ে পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। একটা সাবমারসিবল বসাতে লাখ টাকা খরচ হয়। আমরা পারি না। বিএমডিএর গভীর নলকূপই আমাদের একমাত্র ভরসা। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকলে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে আমরা বসে থাকি।

তানোরের পাশাপাশি গোদাগাড়ী উপজেলার গ্রামগুলোতেও তীব্র পানি সংকট বিরাজ করছে। উপজেলার ললিতনগর এলাকার বাসিন্দা মনজুর হোসেন বলেন, আগে মানুষ খাদ্যের চিন্তা করত। এখন এলাকার মানুষের বড় চিন্তা হয়ে উঠেছে পানি। পানির অভাবে এলাকাবাসী গরু-ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

এদিকে রাজশাহীর পদ্মা তীরবর্তী বাঘা উপজেলার গ্রামগুলোর টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। উপজেলার গড়গড়ি এলাকার বাসিন্দা জায়েদা খাতুন বলেন, এপ্রিল শুরু হওয়ার পর টিউবওয়েলে পানি নেই। এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও এক বালতি পানি তোলা যাচ্ছে না। এখন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে। উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছি। এরপরও পানি উঠছে না। বিদ্যুৎচালিত মোটর বসানো আছে, সেখানেও পানি উঠছে না। সংকট ভয়াবহ।

অন্যদিকে তীব্র খরায় বরেন্দ্রভূমিতে বোরো খেতে সেচ সংকট বেড়ে গেছে। বিএমডিএর গভীর নলকূপগুলো কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী পানি দিতে পারছে না। রাজশাহীর জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, প্রতিবছর এপ্রিল-মে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিস্তর নেমে যায়। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। রাজশাহীর আবহাওয়া এখন বেশ উত্তপ্ত। গ্রামাঞ্চলে পানির সংকট আছে বলে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিজ বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব রাজশাহী অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি কম হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারও এজন্য অনেকাংশে দায়ী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানো। এতে স্থিতিশীল একটা অবস্থা আসতে পারে।(যুগান্তর)




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD