বিএনপি স্পষ্টত দশম সংসদ নির্বাচনের আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হলে আগামী নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
এই দাবি আদায়ে বিএনপির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলন চলবে এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত।’
শুক্রবার গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া চালা ময়দানে প্রয়াত বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহর ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন ফখরুল।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগেও এই অবস্থান ছিল দলটির। সেই ভোট ঠেকাতে সহিংস আন্দোলনও করে তারা। তবে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই ভোটে আসে তারা। এবার আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে যদি দলীয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সরকার থাকে, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেই কারণে আমরা বলছি, নির্বাচন যদি হতে হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচন এই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না, নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
বিএনপির এই বক্তব্যের বিপরীতে আওয়ামী লীগ যা বলছে, সেটা হলো এই সরকার ব্যবস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। ফলে দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, তা নিয়ে কথা উঠেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর উচ্চ আদালতে একটি রিটের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এরপর সরকার নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উচ্চ আদালতে মীমাংসা হয়ে যাওয়ায় এখন আর কিছু করা সম্ভব নয়।
ফখরুল অবশ্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এসব বক্তব্যকে অসার বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জীবনেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়কের অধীনে তারা ২০টি আসনও পাবে না। তাই তারা বলছে, তত্ত্বাবধক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। আমাদের কথাও পরিস্কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে, তা না হলে কোন নির্বাচন হবে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সরকার আদালতকে কুক্ষিগত করেছে। যারা ব্যাংক ডাকাতি করছে, মানুষ খুন করছে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে জামিন দেয়া হচ্ছে। অথচ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রেখে জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারণ, তিনি জামিনে বাইরে বের হয়ে আসলে, হ্যামিলনের বংশিবাদকের মতো হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ বের হয়ে আসবে আর এই সরকারের গদি উল্টে যাবে।’
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কামরুজ্জামান রতন, সহ সাংগঠনিক বেনজির আহমেদ টিটু, হুমায়ুন কবির খান, রফিকুল ইসলাম, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল,মেয়র মুজিবুর রহমান, ওমর ফারুকও বক্তব্য রাখেন।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মরহুম হান্নান শাহ’র আত্মার শান্তি কামনা করে কবর জিয়ারত করেন।