গেলো ১১ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয় গত আগস্ট মাসে, এর হার ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। অবশ্য পরের মাস থেকেই তা কমতে থাকে। এক মাস বিরতির পরেই এই হার নেমে আসে ৯ শতাংশের নিচে। গত অক্টোবর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতির হার আরও খানিকটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশে।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) পরিকল্পনামন্ত্রীর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সাংবাদিকরা বলেন, বাজারঘাট ঘুরে দেখি প্রতিনিয়তই খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি। বাজারের সঙ্গে বিবিএস-এর তথ্যের মিল নেই। খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে কোন কোন বাজারে, এসব বাজারের তালিকাও মন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘নভেম্বর মাসে অত্যন্ত ভালো খবর পেয়েছি। মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে আরও কমার সম্ভাবনা আছে।’ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান, শাক সবজি হওয়ার পাশাপাশি তেল গ্যাসের দাম বিশ্বব্যাপী কমায় সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিও ৭ শতাংশে নেমে যাবে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তেল ও গ্যাস সরকার নিজে কিনে বিক্রি করে, সরকার কোনও মহাজনি নয়, এটা নিয়ে লাভ করবে না। বিশ্ববাজারে দাম কমলে অবশ্যই সরকার কমাতে বাধ্য হবে। মূল্যস্ফীতি পরিমাপকের সূচকগুলো পর্যালোচনা করবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এমন কিছু পণ্য যা নিত্য প্রয়োজনীয় না তা এ তালিকায় রাখা হবে কিনা তা ভাবা হবে। মূল্যস্ফীতির বাড়ন্ত ভাব নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন, এখানে তা হয়নি। ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করার কারণে সম্ভব হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে। গত তিন মাসে ধারাবহিকভাবে মূল্যস্ফীতি হ্যাট্রিক হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমাদের দেশে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। আমাদের ধান ও সবজি উৎপাদন ভালো হয়েছে। সরকার জ্বালানি কেনে এবং বিক্রি করে। সামাজিক ও বাস্তব কারণে পণ্যের দাম বাড়াতে হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমলে আজ না হয় কাল, আমাদের দেশেও দাম কমবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৪২২টি পণ্যের উপর মূল্যেস্ফীতি যাচাই করা হয়। এখন সেগুলো আবার পুনর্বিবেচনা করা হবে। কেননা এখানে সোনার দামও ধরা হয়েছে। সোনার দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। এছাড়াও মাখন ও কফিসহ এ রকম অনেক পণ্যের দাম ও ধরা হয়। এগুলো সংশোধন করা হবে।’
এসময় মন্ত্রী অভিযোগ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে অনেকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। তারা বলতে চেয়েছিল, এটা ভালো সময়ের কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে। কিন্তু তাদের কথা ঠিক নয়। মূল্যস্ফীতি কমার মূল কারণ হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। কোনও কোনও পণ্যের কর ছাড় এবং টিসিবিরি পণ্যে বিক্রির কারণে মূল্যস্ফীতি কমেছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মধ্যবিত্তের দিকে আলাদা কোনও টার্গেট নেই সরকারের। অর্থনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক কারণে নিম্ন বিত্তের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির হিসাবে, নভেম্বর মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ হয়েছে, গত মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সবজিসহ নানা খাদ্যপণ্যর দাম কমেছে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭০ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
নভেম্বরে মজুরি হার শতকরা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। কৃষি খাতে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। শিল্প খাতে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সেবা খাতে মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।
গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ, আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। ওই মাসে মজুরির হার ছিল ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মজুরির হার আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।