সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন




আর্জেন্টিনা ভক্তদের যতো উন্মাদনা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ৭:৫৭ pm
Argentine Footballer Lionel Andrés Messi আর্জেন্টিনা তারকা লিওনেল মেসি messi support Bangladesh
file pic

মরুর দেশ কাতারের বুকে বিশ্বকাপ ফাইনালের লড়াই শুরু হতে বাকি আর কয়েক ঘণ্টা। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ফুটবলের ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স।

বিশ্বকাপ জ্বরে যেখানে সারা বিশ্ব কাঁপছে সেই কম্পনের বড় আঁচ পড়েছে বাংলাদেশেও। ইতিমধ্যে খেলা নিয়ে উত্তেজনা, উন্মাদনা শুরু হয়েছে সমর্থকদের মধ্যে।

তবে এই জয়োল্লাস বড় অংশ আর্জেন্টিনাকে ঘিরে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আর্জেন্টিনা সমর্থকরা এই ফাইনাল ম্যাচকে সামনে রেখে নানা রকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

কেউ বিশাল পতাকা টানিয়েছেন, ঢোল-বাদ্য পিটিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা করছেন, আবার একসাথে ফাইনাল খেলা দেখতে বিশাল ময়দানে প্রজেক্টর বসানোর পাশাপাশি চলছে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন।

প্রস্তুত রাখা হয়েছে আতশবাজি, পটকা। তবে সেই আতশবাজি কোন দলের পক্ষে ফুটবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে রাত পর্যন্ত।

“মেসির বিদায় হবে এক মনোমুগ্ধকর বিদায়”

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ মিছিল করেছেন আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা।

ফাইনালে আর্জেন্টিনা দল ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে, এমন প্রত্যাশায় ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেন অন্তত কয়েকশ আর্জেন্টিনার ভক্ত।

এসময় সমর্থকদের প্রায় সবার পরনে ছিল ১০ নম্বর সম্বলিত মেসির জার্সি আর কণ্ঠে ছিল আর্জেন্টিনার জয়ের শ্লোগান।

মিছিলে অংশ গ্রহণ করা এক ভক্ত বলেন, “আর্জেন্টিনা সৌদিআরবের কাছে ২টা গোল খাওয়ার পর সৌদি সমর্থকরা বলেছিল ‘হোয়্যার ইজ মেসি’, ‘হোয়্যার ইজ মেসি’। আমি বলতে চাই মেসি এখন ফাইনালে। আমরা আর্জেন্টিনার যতো সমর্থক আছি সবাই চাই মেসি এবার কাপ নিবে এবং মেসির বিদায় হবে এক মনোমুগ্ধকর বিদায়।”

এদিকে খেলার দিন ভক্তদের খাওয়াতে বিশাল রান্নার আয়োজনও করেছেন এই আর্জেন্টিনা ভক্তরা।

আর্জেন্টিনার জয় ছাড়া কিছু ভাবতে পারছেন না

একইভাবে রোববার ফাইনাল ম্যাচের দিন আর্জেন্টিনার আড়াই হাজার সমর্থককে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর পাশাপাশি ভুনাখিচুড়ি খাওয়ানোর আয়োজন করেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের আর্জেন্টিনা ফুটবল ভক্তরা।

এর আয়োজকরা জানান বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলের তুলনায় তাদের গ্রামে আর্জেন্টিনার সমর্থক অনেক বেশি।

আর্জেন্টিনাই এবার কাপ নেবে, এর বিপরীতে আর কিছু ভাবতে পারছেন না তারা।

ফাইনালে আর্জেন্টিনা জিতলে গোটা তালা উপজেলায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেয়ার কথাও জানা গিয়েছে।

এদিকে পাবনার চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামেও মেসি ভক্তদের উন্মাদনা চলছে। প্রত্যন্ত ওই গ্রামের আর্জেন্টিনা ভক্তরা চাঁদা তুলে এরিমধ্যে ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্য পতাকা তৈরি করে আলোচনায় এসেছে।

বিশ্বকাপের আয়োজন শুরু হওয়ার পর থেকে এই পতাকা নিয়ে গ্রামের সড়কে আনন্দ মিছিল করেন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা।

বর্তমানে গ্রামের সড়কের পাশে সবাই টাঙানো রয়েছে বিশাল এই পতাকাটি।

“পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আর্জেন্টিনার সাপোর্ট ছড়িয়ে দিতে চাই। ”
একইভাবে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সরকারি কলেজ মাঠে আনন্দ উল্লাস করে দলের জয়ের প্রত্যাশা করছেন আর্জেন্টিনা ভক্তরা।

শনিবার ওই মাঠে আর্জেন্টিনার জার্সি পরে হাজির হন কয়েকশ ভক্ত। পরে তারা ব্যান্ডের তালে নেচে গেয়ে আনন্দ করেন। পরে ৫০০ ফুটের বিশাল পতাকা নিয়ে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিজয় মিছিল করেন।

আবার জামালপুরের সরিষাবাড়িতে একসঙ্গে ১৫শ মানুষকে খিচুড়ি খাওয়ানো ও বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছেন মাসুদুর রহমান নামের এক আর্জেন্টিনা ভক্ত।

সরিষাবাড়ি পৌর এলাকার চর ধানাটা গ্রামে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে তার রান্নার আয়োজন।

এর আগে নিজ উদ্যোগে এক হাজার ৬০ ফুট দীর্ঘ পতাকা বানিয়ে তিনি সারা গ্রামে র‍্যালি করেন।

পতাকাটি বানাতে তার খরচ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকার মতো। যা তিনি সবটাই খরচ করেছেন নিজের পকেট থেকে। আবার রোববার খাওয়ার দাওয়ার আয়োজনও করছেন নিজ উদ্যোগে।

এ নিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, “আমি সচ্ছল পরিবারের ছেলে, আমার যতোটুকু সামর্থ্য আছে আমি করছি। আমি এই আয়োজনের মাধ্যমে আসলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আর্জেন্টিনার সাপোর্টের বিষয়টা ছড়িয়ে দিতে চাই। সবাই আনন্দ করছে, এটাই আমার আনন্দ। আর বেশি হিসাব করছি না।”

তিনিও ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয় ভিন্ন আর অন্য কিছুই ভাবতে পারছেন না।

“খেলায় তো জয় পরাজয় আছে। কিন্তু আজকে মেসিই জিতবে। এর বেশি কিছু জানি না।”

আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপ জয় করলে এলাকাবাসীকে পুনরায় গরু জবাই করে ভোজের আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

ফ্রান্সের জন্য দুই কিলোমিটার পতাকা

একইরকম উন্মাদনার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল নামে সিরাজগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামের খামারি। তবে তার এই উন্মাদনা ফ্রান্সের জন্য।

তিনি থাকেন তাড়াশ উপজেলার, নওগাঁ ইউনিয়নের, কালিদাসনীলি গ্রামে।

প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন জানাতে গ্রামের সরিষার ক্ষেত্রে চারপাশে ফ্রান্সের দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা টানিয়ে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

দীর্ঘ এই পতাকা তৈরি করতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে মি. চঞ্চল দাবি করেন।

এই অর্থ যোগাড় করেছেন নিজের একমাত্র উপার্জনের পথ হাঁসের খামারটি বিক্রি করে দেন তিনি।

এজন্য বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে আছেন তিনি। অনেকে নাকি তার এসব কাজকে ‘পাগলামি’ বলেও সম্বোধন করছেন।

এরপরও ১৯৯৮ সাল থেকে একটানা ফ্রান্সকে সমর্থন দিয়ে আসছেন মি. চঞ্চল। প্রতিবার বিশ্বকাপেই তিনি ছোট বড় মাঝারি নানা আকারের পতাকা উত্তোলন করতেন।

তবে গতবার দেড় কিলোমিটার এবং এবার দুই কিলোমিটার পতাকা বানিয়ে তিনি বেশ আলোচনায় এসেছেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD