পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোরপ্রাইস তুলে দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে এসব কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ফ্লোরপ্রাইস থাকবে না। সেই সঙ্গে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ শতাংশ, যা এখন আছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক আদেশে জানানো হয় ১৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন সীমা বা ফ্লোর প্রাইস থাকবে না। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়, দরপতনের হারের সীমা কমানো হলেও দরবৃদ্ধির হারের সীমা আগের মতোই এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হবে।
ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেওয়া হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সার্কিটব্রেকারের নীম্ন সীমা কমানো হয়েছে। আলোচিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের নিম্নমুখী সার্কিটব্রেকার হবে ১ শতাংশ। অর্থাৎ আগের দিনের রেফারেন্স মূল্য অথবা ক্লোজিং মূল্যের চেয়ে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম। কিন্তু উর্ধমুখী সার্কিটব্রেকার ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর জারি করা আদেশ অনুসারে কার্যকর হবে।
সার্কিট ব্রেকারের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম একদিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। একইভাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানের ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকলে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে থাকলে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকার মধ্যে থাকলে ৫ শতাংশ এবং ৫০০০ টাকার ওপর হলে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সবচেয়ে কম, এমন কোম্পানি তারা বেছে নিয়েছেন। তাদের সম্মিলিত বাজার মূলধন পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনের ৫ শতাংশের মতো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অচলাবস্থা চলছে। এই অবস্থায় এই ধরনের উদ্যোগ দরকার ছিল। ১ শতাংশ কমে কমতে কমতে একপর্যায়ে ক্রেতা চলে আসবে। তখন লেনদেন বাড়বে।’ তিনি মনে করেন, দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে দেয়ায় ফ্লোর তোলার পরেও সূচকে প্রভাব পড়বে না। এর কারণ, শেয়ারের দর কমতে পারবে খুবই কম। আর পরিশোধিত মূলধন কম থাকায়, কোম্পানিগুলোর শেয়ারসংখ্যাও কম, ফলে দাম কমলেও সূচকে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
অব্যাহত দরপতনের মুখে গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হয়। করোনার প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের মার্চেও দরপতন ঠেকাতে একই পদক্ষেপ নেয়া হয়।
করোনার সময় ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হলেও এবারের চিত্রটি অন্য রকম। শুরুর দুই মাস বাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়লেও তা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানির দর বাড়লেও বেশির ভাগ কোম্পানির লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও যখন কমতে থাকে, তখন লেনদেনও নামতে থাকে। এখন নিয়মিত লেনদেন হচ্ছে তিন শ কোটি টাকার ঘরে।
কিন্তু ফ্লোরের বাধায় লেনদেন যে কমে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট। এই মুহূর্তে তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোরে অবস্থান করছে। বুধবার এই নতুন সিদ্ধান্ত আসার দিন একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি ১০২টি কোম্পানির। ২০৩টি কোম্পানির লেনদেন হলেও তা ছিল নামমাত্র। এই দুই শতাধিক কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন ছিল ছয় কোটি টাকার কিছু বেশি।
এই চিত্র কেবল এক দিনের নয়, গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরেই এটি দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ফ্লোরের শেয়ারদর বিনিয়োগকারীদের কাছে যৌক্তিক মনে না হওয়ায় তারা শেয়ার কিনতে আগ্রহী নয়। আবার কেনাবেচা হয় না বলে শেয়ারের চাহিদাও তৈরি হয় না।
একপর্যায়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিএসইসির কাছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার দাবি জানালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সুবিধা বহাল থাকবে। শেষমেশ সেই অবস্থান থেকে সরতে হলো তাদের।
করোনার সময়ও এভাবে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রত্যাহার করে একপর্যায়ে তুলে দেয়া হয়। সে সময়ও ফ্লোর তুলে নেয়া নিয়ে একধরনের আতঙ্ক ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কিন্তু পরে দেখা যায়, ফ্লোর প্রত্যাহারে হওয়ার পর বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর শুরুতে কমলেও পরে বেড়েছে।
এরপর তখন ফ্লোর প্রত্যাহার হওয়া কোম্পানির দরপতনের সীমা এক দিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এবার তা আরও কমানো হলো।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১ শতাংশ নির্ধারণ হওয়ায় যেসব কোম্পানির শেয়ারদর ১০ টাকার নিচে, সেগুলোর দর কমতে পারবে না।
যেসব কোম্পানির দর ১০ টাকা থেকে ১৯ টাকা, সেগুলো একদিনে কমতে পারবে ১০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ২০ টাকা থেকে ২৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ২০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৩০ টাকা থেকে ৩৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৩০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৪০ টাকা থেকে ৪৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৪০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৫০ টাকা থেকে ৫৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৫০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৬০ টাকা থেকে ৬৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৬০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৭০ টাকা থেকে ৭৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৭০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৮০ টাকা থেকে ৮৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৮০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৯০ থেকে ৯৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে ৯০ পয়সা।
যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ১০০ টাকা থেকে ১০৯ টাকা, সেগুলোর দর এক দিনে কমতে পারবে এক টাকা।
এভাবে ২০০ থেকে ২৯৯ টাকা পর্যন্ত শেয়ারের দর এক দিনে ২ থেকে ২ টাকা ৯০ পয়সা, ৩০০ থেকে ৩৯৯ টাকা পর্যন্ত শেয়ারের দর ৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ টাকা ৯০ পয়সা, ৪০০ টাকা থেকে ৪৯৯ টাকা পর্যন্ত শেয়ারের দর ৪ থেকে ৯ টাকা ৯০ পয়সা, ৫০০ থেকে ৫৯৯ টাকা পর্যন্ত শেয়ারের দর ৫ থেকে ৫ টাকা ৯০ পয়সা, ৬০০ থেকে ৬৯৯ টাকা পর্যন্ত কোম্পানির দর ৬ টাকা থেকে ৬ টাকা ৯০ পয়সা, ৭০০ থেকে ৭৯৯ টাকার শেয়ার ৭ টাকা থেকে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। এক হাজার টাকার শেয়ার দিনে সর্বোচ্চ ১০ টাকা, ২ হাজার টাকার শেয়ারের দর ২০ টাকা, সাড়ে চার হাজার টাকার শেয়ারের দর সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কমতে পারবে এক দিনে।