বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন




প্রশাসন, পুলিশ ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের ইসি

প্রশাসন, পুলিশ ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের ইসি: ভোট কম পড়ুক তবুও যেন অনিয়ম না হয়

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:২১ am
CEC election commission নির্বাচন কমিশন ইসি সিইসি Kazi Habibul Awal কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন সিইসি ইসি cec ec election প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল cec
file pic

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কম পড়লেও ভোটগ্রহণের সময়ে যেন কোনো অনিয়ম না হয়-সেই বিষয়ে প্রশাসন, পুলিশ ও নিজস্ব কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচনে কেউ নিয়মের বাইরে কাজ করলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ ও ইসির কর্মকর্তাদের কাজে সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কারও কাজে ও বক্তব্যে যেন বিতর্ক তৈরি না হয় সেই দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে এসব বার্তা দেওয়া হয়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দুদিনের এ প্রশিক্ষণ শনিবার শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আরও জানা গেছে, ওই প্রশিক্ষণে সম্প্রসারণ বক্তা হিসাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যে নির্বাচনে ভোটার, প্রার্থী ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি উঠে আসে।

বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তাদের কেউ কেউ বলেন, এ নির্বাচনে বড় কোনো দল অংশ না নিলে এবং ওই দল যদি কর্মসূচি দেয়, তখন ভোটার, প্রার্থী, ভোটকেন্দ্রসহ সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। নির্বাচনে কোনো কর্মকর্তার গাফলতি, ব্যর্থতা, দায়িত্ব পালনে শিথিলতা বা অপারগতা দেখালে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

চলতি সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে এবারই প্রথমবারের মতো মাঠপ্রশাসন, পুলিশ ও ইসির কর্মকর্তাদের একসঙ্গে প্রশিক্ষণের আয়োজন করল ইসি।

প্রথম ধাপে ১৪ ও ১৫ অক্টোবর ১১৬ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০ ও ১১ নভেম্বর ১১৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো। প্রতিটি ধাপে মোট ১২টি সেশন ছিল। এতে নির্বাচনে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রায় সব বক্তা। নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তুলে তারা নিয়মতান্ত্রিক ভোটগ্রহণের ওপর জোর দেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে এ নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

প্রশিক্ষণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রশিক্ষণের প্রথম দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বক্তব্য দেন। গতকাল সমাপনীতে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

সমাপনী আলোচনার একপর্যায়ে মো. আলমগীর প্রশাসন, পুলিশ ও ইসির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে ভোট কম পড়লেও সমস্যা নেই। তবে ভোটকেন্দ্রে গন্ডগোল ও অনিয়ম যেন না হয়। আইন ও বিধি মোতাবেক ভোটগ্রহণ করার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময় তিনি ঢাকা-১০ আসনে ৫.২৮ শতাংশ ভোট পড়ার উদাহরণ টেনে আনেন।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিন সিইসি ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। তিনি নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে নিয়মের বাইরে কেউ কিছু করতে চাইলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। ভোটে অনিয়ম পেলে সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দেব। অনিয়মের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট বন্ধ করে দিয়েছি। তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

লক্ষ্মীপুর-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের কারণে ওই দুই আসনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত করে রেখেছি। সেখানেও অনিয়মের তদন্ত চলছে। একই পদক্ষেপ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেওয়া হবে। অতি উৎসাহী হয়ে কর্মকর্তাদের বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

প্রশিক্ষণে সম্প্রসারণ বক্তাদের একজন বলেন, বড় দল অংশ না নিলে এক ধরনের প্রস্তুতি, আর অংশ নিলে আরেক ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, বড় দল অংশ না নিলে এবং তারা যদি কর্মসূচি দেয় তখন ভোটার, প্রার্থী, ভোটকেন্দ্রসহ সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষিপ্রতা থাকতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দ্বিধান্বিত হওয়া যাবে না।

প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরেক বক্তা বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকাবস্থায় কর্মকর্তাদের কথা ও কাজে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া বা কাজ করা যাবে না যাতে বিতর্কের জন্ম দেয়। আরেকজন বলেন, নির্বাচনে কোনো কর্মকর্তার গাফলতি, ব্যর্থতা, দায়িত্ব পালনে শিথিলতা বা অপারগতা দেখালে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণের শেষ দিনে সাংবাদিকদের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, নীতিমালায় একটি কক্ষে একজন সাংবাদিক ১০ মিনিট অবস্থান করতে পারবেন। একটি কেন্দ্রে ১০টি কক্ষ থাকলে ওই সাংবাদিক ১০০ মিনিট অবস্থান করলে তখন করণীয় জানতে চান ওই কর্মকর্তা।

উত্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, তারা বেশি সময় অবস্থান করলে কোনো সমস্যা নেই। উনারা যদি ভুলত্রুটি ধরতে পারেন, তাহলে আমাদের সেই ভুলত্রুটি সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়। তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনার-আমার কথা কেউ শুনবে না, বিশ্বাস করবে না। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সবাই বিশ্বাস করবে। সাংবাদিকরা আমাদের স্টেকহোল্ডার। গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে আমরা নির্বাচনের খবরা-খবর পেয়ে থাকি।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে প্রায় দুইশ অনলাইন পোর্টাল নিবন্ধিত রয়েছে। এছাড়া ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক রয়েছেন। এতসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকের অনুমোদন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। উত্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এজন্য আগেভাগেই নীতিমালা জারি করা হয়েছে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD