রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন




সেবা বাদ দিয়ে ডাক্তাররা ব্যবসা খুলে বসেছেন: হাইকোর্ট

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ৯:৪৮ pm
SC সুপ্রিম কোর্ট রায় Supreme Court highcourt হাইকোর্ট আদালত
file pic

চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে ডাক্তাররা রোগীদের নিয়ে ব্যবসা খুলে বসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ বার্তা জাতির কাছে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন আদালত। যাতে এ ধরনের ব্যবসা থেকে ভবিষ্যতে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়।

ভিকটিমদের সেবার নামে সিন্ডিকেটের কবলে চিকিৎসা ব্যবস্থা বলেও মন্তব্য করেন আদালত। আদালত আরও বলেন, আগে দেখতাম পরিবারের কোনো সদস্য ডাক্তার হলে তাদের আত্মীয়স্বজনরা ক্লিনিক খুলতেন। এখন ডাক্তারের পরিবার নয়, যে কেউ ক্লিনিকের ব্যবসা করছেন। তাছাড়া সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় হবিগঞ্জের দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের (ক্লিনিক) মালিক ও ডাক্তারসহ চারজনের আগাম জামিন আবেদন শুনানিতে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি বশির উল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এসময় জামিন না দিয়ে ডাক্তারসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল কেএম মাসুদ রুমি।

হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে বলেছেন, বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। প্রত্যেক নাগরিককে তার সংবিধান প্রদত্তে মৌলিক অধিকার প্রদানের নিমিত্ত আমরা ঘোষণা করছি যে, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। তেমনি বিনামূল্যে ভেজালমুক্ত তথা নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার।

ভেজাল প্যারাসিটামল সেবন করে মৃত্যুের ঘটনায় ১০৪ শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন। ৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত রায়ের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

রায়ে আদালত বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশব্যাপী সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও অবকাঠামো প্রশংসনীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে। আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে ওষুধ নিয়মিত আমদানি করছে। অনেক প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করতে আসছে। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তব অবস্থা এমন যে, উন্নত ও সু-চিকিৎসা কেবলমাত্র ধনী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমিত। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তসহ দেশের আপামর সাধারণ জনগণ বলতে গেলে উন্নত চিকিৎসা ও সু-চিকিৎসা হতে বঞ্চিত। তারা কেবল নামেমাত্র সামান্য চিকিৎসা পায়।

হাইকোর্ট বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের করের টাকায় সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তিসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিদেশে হরহামেশা উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতা ও নেত্রীদেরও আমারা দেখি হরহামেশা বিদেশে চিকিৎসার জন্য গমন করতে। কিন্তু সাধারণ জনগণের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের ন্যূনতম সুযোগ নেই। অর্থাৎ যে জনগণের টাকায় উপরোল্লিখিত ব্যক্তিরা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গমন করেন সেই জনগণের কিন্তু বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, যারা সংবিধান মোতাবেক এ দেশটির মালিক, তারা কিন্তু বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে চান না। তারা চান দেশে বিদেশের মতো উন্নত চিকিৎসা সুবিধা থাকুক সকলের জন্য।

সংবিধানের রেফারেন্স দিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) অনুযায়ী নাগরিকদের জীবন ধারণের অন্যতম মৌলিক উপকরণ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ঘ) অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিককে তার অন্যতম সামাজিক অধিকার ব্যাধি তথা রোগ থেকে আরোগ্য লাভের নিমিত্তে সকল প্রকার সরকারি সাহায্য প্রদান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ মোতাবেক রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হলো “জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধন” এবং রাষ্ট্র এটিকে অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে।

সাংবিধানিকভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির জীবন তথা বেঁচে থাকার অধিকার সংরক্ষিত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২-এ বলা হয়েছে যে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে তার বেঁচে থাকার অধিকার হতে বঞ্চিত করা যায় না। অপর কথায় বেঁচে থাকার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া না গেলে ব্যক্তি তার জীবন তথা বেঁচে থাকার অধিকার হতে বঞ্চিত হতে বাধ্য। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার তথা বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। অর্থাৎ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মালিক এ দেশের প্রতিটি নাগরিক।

রায়ে আদালত বলেন, বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়ায় নাগরিকের জীবন তথা বেঁচে থাকার অধিকার আজ হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ তথা প্রত্যেক নাগরিককে তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার প্রদানের নিমিত্তে আমরা ঘোষণা করছি যে, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বিনামূল্যে সকল প্রকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। তেমনি বিনামূল্যে ভেজালমুক্ত তথা নির্ভেজাল ওষুধ পাওয়াও প্রতিটি নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD