বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েও অতৃপ্তি ছিল তিউনিশিয়ার। তালিকার তৃতীয় স্থান নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় উত্তর আফ্রিকার দলটি। তবে পথ হারায়নি অপর আফ্রিকান-আরব দল মরক্কো। বেলজিয়ামের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর গতকাল কানাডাকে ২-১ গোলে হারায় তারা। এতে চলতি বিশ্বকাপের ‘এফ’ গ্রুপ থেকে সেরা দলের মর্যাদা নিয়ে নকআউট পর্বের টিকিট কাটে দলটি।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের শেষ ষোল রাউন্ডে উঠলো মরক্কো। সর্বশেষ তারা এ গৌরব কুড়ায় ১৯৮৬’র আসরে। কাকতালীয়ভাবে সেবারও তারা ছিল আসরের ‘এফ’ গ্রুপে। এবং জায়ান্ট তিন দলকে পেছনে রেখে গ্রপসেরা হয়েছিল তারা। মেক্সিকোতে সেবার ইংল্যান্ড ও পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পর মরক্কানরা হারিয়ে দেয় শক্তিধর পর্তুগালকে।
ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলছে মরক্কো। নিজেদের আগের পাঁচ বিশ্বকাপে মোটেই দুটি জয় ছিল তাদের ঝুলিতে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। গতকাল মরক্কো চমক দেখায় ম্যাচের শুরুতেই। আগের ম্যাচে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট বেলজিয়ামকে হারের স্বাদ দেয়া দলটি গোল পেয়ে যায় মাত্র চতুর্থ মিনিটে। এসময় কানাডার গোলরক্ষক পোস্ট ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছিলেন। আর ডিবক্সের বাইরে থেকে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠান হাকিম জিয়াশ।
বিশ্বকাপে ৩৬ বছর পর ডি বক্সের বাইরে থেকে গোল করলেন মরক্কোর কোনো খেলোয়াড়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে এমন একটি গোল পেয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক খায়েরি। বিশ্বকাপে মরক্কোর শেষ ১৩ গোল ছিল ডি বক্সের ভেতর থেকে পাওয়া। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব চেলসিতে খেলা জিয়াশের গোলের বিশেষত্ব ছিল আরও। গতকালেরটি বিশ্বকাপে মরক্কোর দ্রুততম গোল। আর আফ্রিকার কোনো দেশের দ্বিতীয় দ্রুততম। এমন শীর্ষ রেকর্ডটি ঘানার ফরোয়ার্ড আসামোয়াহ জিয়ানের। ২০০৬ বিশ্বকাপে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে তিনি গোল পান ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের মাথায়।
এদিন ২৩তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইউসুফ আন নাসিরি। প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ক্লাবে (পিএসজি) খেলা উইং-ব্যাক আশরাফ হাকিমির পাসে গোল পান তিনি। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো টানা দুই ম্যাচে কমপক্ষে দুই গোলের কৃতিত্ব দেখালো মরক্কো। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আক্রমণে ধার বাড়ে কানাডার। এতে সুফল পেয়ে যায় ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া দলটি। আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে মরক্কো। এবারের বিশ্বকাপে এটি প্রথম আত্মঘাতী গোল। আবার এটি ছিল কাতার বিশ্বকাপের ১০০তম গোল। অন্য আরেক রেকর্ডেও নাম উঠলো মরক্কোর। বিশ্বকাপে আফ্রিকান দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মঘাতী গোলের ভোগান্তি উত্তর আফ্রিকার দলটির।
এটি ছিল তাদের তৃতীয় আত্মঘাতী গোল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও কানাডার জালে বল পাঠায় মরক্কো। বিরতি থেকে ফিরে চতুর্থ মিনিটে হাকিম জিয়াশের ইনসুইং ক্রস থেকে আন নাসিরির শট স্পর্শ করে জাল। কিন্তু ভিএআর চেক করে অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। এফ গ্রুপ থেকে অপরাজিত থেকেই পরের রাউন্ডে গেলো মরক্কো। দুই জয় ও এক ড্রতে মরক্কোর সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট। আর এক জয়ের সঙ্গে দুটি ড্র নিয়ে গ্রুপ পর্ব পার করলো গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া। এবারের বিশ্বকাপে অনুজ্জ্বল নৈপুণ্যের সঙ্গে ভিন্ন আলোচনায় ছিল বেলজিয়ানরা। আর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচের আগে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক বলেছিলেন ‘নিজেদের গুছিয়ে নেয়া দরকার। সর্বোত্তম কাজ হলো, আমাদের একাট্টা থাকা প্রয়োজন।’ কিন্তু গতকাল বেলজিয়াম নিখুঁত ফুটবল খেলতে পারেন। ম্যাচে ৫২ শতাংশ বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের গোলবারে ১৬টি শট নেয় বেলজিয়ানরা। যার মাত্র তিনটি ছিল অনটার্গেটে। রমেলু লুকাকু একাই নষ্ট করেন ৪টি পরিষ্কার সুযোগ।
প্রথমার্ধের ৬টি শট নেয় ক্রোয়েশিয়া আর ৫টি বেলজিয়াম। দু’দলের কোনো শটই অনটার্গেটে ছিল না। চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় শেষে বেলজিয়ান তারকা কেভিন ডি ব্রুইনাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বেলজিয়ামের ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ কি বিশ্বকাপ জিততে পারবে? উত্তরে ডি ব্রুইনা বলেছিলেন, ‘না আমরা খুবই বুড়ো একটি দল।’ ডি ব্রুইনার মন্তব্যকে হয়তো ভালোভাবে নেননি দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে হারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, হারের কারণ কী? উত্তরে ৩৫ বছর বয়সী বেলজিয়ান সেন্টার-ব্যাক ইয়ান ভারটংগেন বলেন, ‘(হারের কারণ হলো) আমাদের আক্রমণ ভাগের খেলা খুব খারাপ ছিল। কারণ উপরের দিকে যারা খেলে তাদেরও বয়স হয়েছে।’
শুধু বয়স নিয়ে মন্তব্যের জেরেই যে বেলজিক ড্রেসিংরুমের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে তা কিন্তু নয়। আগে থেকেই খেলোয়াড়দের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বলে খবর রয়েছে। গার্লফ্রেন্ড ইস্যুতে ডি ব্রুইনা ও থিবো কোর্তোয়ার দ্বন্দ্ব পুরনো। তাছাড়া রোমেলো লুকাকুর সঙ্গে মিচি বাতশুয়াইয়ের দূরত্ব রয়েছে বলে গুঞ্জন।